হোম জাতীয় ময়লার ট্রাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ বহন!

জাতীয় ডেস্ক :

শেরপুর পৌরসভায় মরদেহ বহন করার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই মরদেহ বহনের জন্য ব্যবহার করা হয় পৌরসভার ময়লার ট্রাক। এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। তারই ধারাবাহিকতা বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক তালাপতুফ হোসেন মঞ্জুর মরদেহও ময়লার ট্রাকে করে শহীদ মিনার, জানাজার জন্য পৌর ঈদগাহ মাঠ ও পরে দাফনের জন্য চাপাতলী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ দৃশ্য দেখে চরম ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শোনার পর শেরপুরে যে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রথম হাতে অস্ত্র তুলে নেন তাদের মধ্যে মঞ্জু অন্যতম। মঞ্জুর ভাই বুলবুল মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে শহীদ হন। বঙ্গবন্ধু কিলিংয়ের পর যারা চরম দুর্দিনে রাজপথে সংগ্রাম করেছেন তাদের অন্যতম আমাদের মঞ্জু। শেষ বয়সে মঞ্জুর মাথা গোঁজার কোনো জায়গা ছিল না। তাকে ভাড়া বাসায় থাকতে হতো। অন্তিম যাত্রায় তাকে ময়লার গাড়িতে করে শেষ ঠিকানায় যেতে হলো। এর চেয়ে কষ্টের, এর চেয়ে বেদনার কী হতে পারে!’

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সেখানে জেলা প্রশাসক, পৌরসভার মেয়রসহ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন। তবুও এমন ঘটনা ঘটেছে।’ শুধু তাই নয় পৌরসভার মেয়রের নির্দেশেই ময়লার ওই গাড়িটি মঞ্জুর লাশ বহনের জন্য আনা হয়েছিল বলেও জানান অধ্যক্ষ মো. আখতারুজ্জামান।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার মো. শহিদুর রহমান সময় সংবাদকে বলেন, ‘এটা সরাসরি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননা নয় বরং মুক্তিযুদ্ধকেই অবমাননা করা হয়েছে। আর যারা এই বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেছেন তাদের ধিক্কার জানাই।’

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নূরল ইসলাম হিরো সময় সংবাদকে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ ময়লা ফেলার গাড়িতে করে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য লজ্জার। শুধু মুক্তিযোদ্ধা নয় যে কোনো মরদেহই ময়লার গাড়িতে বহন করা উচিত নয়। এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক কিছুই বলার থাকে, তবে সব কিছুই তো আর বলা যায় না।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মৃতের পরিবার ও সেক্টর কমান্ডার ফোরামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মাওলা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. আখতারুজ্জামানের অনুরোধেই তিনি গাড়িটি দিয়েছেন বলে জানান। গাড়িটি সুন্দর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়েছে বলেও সময় সংবাদকে জানান পৌর মেয়র।

তিনি বলেন, ‘মানবিক কারণে প্রতি মাসে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জনের মরদেহ এভাবে বহন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মঞ্জু ভাইয়ের পরিবারের অনুরোধে মানবিক কারণে আমি গাড়িটি দিয়েছি।’

লাশবাহী গাড়ি ক্রয়ের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে দুইবার চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সম্ভবত অর্গানোগ্রামে না থাকায় অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আমরা দ্রুত সময়ের একটি লাশবাহী গাড়ি সংগ্রহের চেষ্টা করছি।’

আর ময়লার গাড়িতে মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ বহনের বিষয়টি জানতেন না বলে জানান শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ। সময় সংবাদকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার কাছ থেকেই জানলাম। আমি মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন