হোম খুলনাযশোর মনিরামপুরে মাদকের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে অনলাইন জুয়া, প্রশাসনের নজরদারি জরুরী

মনিরামপুরে মাদকের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে অনলাইন জুয়া, প্রশাসনের নজরদারি জরুরী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 130 ভিউজ

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

অনলাইন ক্যাসিনো বা জুয়া একটি আতঙ্কের নাম। মাদকের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠছে এই অনলাইন জুয়া। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম এ জুয়ায় আকৃষ্ট হয়ে হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করছে এবং এক পর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর, নেহালপুর, দূর্বাডাঙ্গা ও কুলটিয়া ইউনিয়নের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ অনেকেই এখন অনলাইন ক্যাসিনো নামের জুয়ায় মত্ত হয়ে উঠছে। উপজেলার জুয়াড়িরা ওয়ান এক্সবিট নামে অনলাইন জুয়ায় সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট ও আসক্ত হচ্ছে। ওই এলাকার প্রতিটি বাজারে আড্ডার আড়ালে চলে এই অনলাইন ক্যাসিনো নামের জুয়া। বিভিন্ন চা স্টলে, গুদাম ঘরের মেঝে, প্রতিষ্ঠানের ছাদে, খোলা মাঠে, এমনকি বাড়িতে শুয়ে বসে চলছে ক্যাসিনো জুয়ার আসর। অনেকে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে পারিবারিক কলহসহ নারী নির্যাতনের মতো নানাবিধ অপরাধ।

জুয়ার বিভিন্ন অ্যাপের ব্যবহার ও ক্যাসিনো খেলার নিয়ম ফেসবুক পেজ, ইউটিউবসহ নানা সাইডে বিজ্ঞাপন আকারেও ভাসছে অহরহ। টাকার বিনিময়ে গ্রুপের সদস্য হওয়ার শর্ত দেয়া হয়। চাওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বয়স, জন্ম তারিখ ও মোবাইল ফোন নম্বর। এসব তথ্য দিয়েই জুয়ার গ্রুপে সদস্য হওয়ার অনুমতি পাওয়া যায়। জুয়ায় জড়িত ব্যক্তিরা জানান, এসব অ্যাপসের বেশির ভাগই পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাংলাদেশে এগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধি (এজেন্ট) রয়েছে। তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ বা প্রদান করে থাকে। এজেন্টরা বিদেশি অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে হাজারে কমপক্ষে ৪০ টাকা কমিশন পায়। এজেন্টদের মাধ্যমেই বিদেশে টাকা পাচার হয়।

মনোহরপুর ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ী মাহতাবুর হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন আমি নিজে কৌতুহলবশতঃ একটি অ্যাপস নামিয়েছি। এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে ডিপিও করি ৫০০ টাকা। চোখের পলকে মনে হলো ফুড়ুৎ করে বাতাসে টাকাটা নিয়ে চলে গেল। তবে আমি মনে করি এভাবে যদি চলতে থাকে এলাকার যুবসমাজ নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি অবাক হয়ে যাই সেভেন এইটে পড়–য়া ছেলেরাও এই জুয়ায় নেশাগ্রস্থ হয়ে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জুয়াড়ি জানান, মনোহরপুর ইউনিয়নের মৃত ইউসুফ আলী গাজীর ছেলে মোঃ নাজিউর রহমান মাস্টার এজেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া মোঃ পাভেল, পাপ্পু, সোহেল, আলী আজম বাচ্চুসহ অনেকেই অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসাবে সারা ইউনিয়ন পরিচালিত করছে। অপরদিকে স্থানীয় আরেকটি সূত্রে জানা যায়, নেহালপুর ইউনিয়নে মাস্টার এজেন্টের দায়িত্ব রয়েছে ইস্রাফিল নামের আরেকজন জুয়াড়ি। তার আন্ডারে এজেন্ট রয়েছে ইমদাদ, শাহীন, রিপন, বাহারুল, শফিকুল, তরিকুল, সিরাজ, ইনামুল, মহিদুলসহ বেশ কয়েকজন। একইভাবে দূর্বাডাঙ্গা ও কুলটিয়া ইউনিয়নেও মাস্টার এজেন্ট ও এজেন্টদের মাধ্যমে চলছে জুয়া খেলা।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারী নেহালপুর পুলিশ ক্যাম্প ও ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে নেহালপুর ও মনোহরপুর থেকে ৫জনকে আটক করে আদালতে পাঠায়। এছাড়া ১৪ মার্চ আবারও ডিবি পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। নেহালপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল হান্নান জানান, অনলাইন জুয়া বন্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তথ্য পেলেই জুয়ার আড্ডায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে এলাকার বিশিষ্টজনরা অনলাইন ক্যাসিনো নামক এসব জুয়া বন্ধে প্রশাসনের জোর নজরদারি কামনা করছেন। এখনই যদি এটি প্রতিহত করা না হয় তাহলে অচিরেই ঘোর অন্ধকারে ঢেকে যাবে ভবিষ্যত প্রজন্মের নক্ষত্ররা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন