রিপন হোসেন সাজু:
যশোরের মনিরামপুরে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় আমন ধানের মৌসুমের শুকনা খড় (বিচালি) পচে যায়। এতে উপজেলা জুড়ে দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যের তীব্র সংকট। খড় পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। তারপর রয়েছে দানাদার গোখাদ্যের লাগামহীনভাবে বেড়েছে দাম। জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টিতে ভবদহসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চাষিদের লাগানো আমন ধানের খড়ের গাদা পানিতে ডুবে পচে নষ্ট হয়ে যায়। খামারিদের সঞ্চিত খড় নষ্ট হওয়ায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খামারিরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী উঁচু অঞ্চল থেকে খড়ের গাদা কিনে এনে আঁটি তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছেন। খড় আগের দামের চেয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে, ভুষি,খল ও চালের গুঁড়াসহ বিভিন্ন দানাদার গোখাদ্যের দামও লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। প্রতি বস্তা ভুষি এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খল ২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে। ধানের গুঁড়া প্রতি বস্তা ৫২০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের খামারি আমজেদ মোল্লা ও গৃহবধু ফরিদা বেগম বলেন, তার গরুর জন্য ব্যপারিদের কাছ থেকে কাউন প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দাম দিয়ে খড় কিনেছেন। এই সমপরিমাণ খড় গত বছরে তিনি ৩ হাজার টাকাতেও কেনেননি। গরুকে বাঁচিয়ে রাখতে নিরুপায় হয়ে ৫ গুণ বেশি মূল্যেই খড় কিনতে হয়েছে। তারপর নদী থেকে শেওলা সংগ্রহ করে গরুর খাওচ্ছি। আমিনপুর গ্রামের মশিয়ার রহমান বলেন, সারা বছর গো-খাদ্যর জন্য সঞ্চিত রাখা হতো শুকনো খড়। এ বছর অতিবর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে খড় পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়িতে খড় থাকায় কাঁচা ঘাসও মিলছে না। তিনিও চড়া দামে চিনাটোলা বাজার থেকে ৮ হাজার টাকা দামে খড় কিনেছেন। তবে তিনটি গরুর ১০ দিনের খাবারও হয়নি। শ্যামকুড় গ্রামের ইলিয়াস ও নাসির নামের খামারি বলেন, ভুষি ও ধানের গুঁড়োসহ দানাদার খাদ্যের দামও বেড়েছে। খড় ও দানাদার খাদ্য মিলে প্রতিটি গরুর খাদ্যের পেছনে দৈনিক ২০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আগামী এক মাসেও মাঠে নতুন ঘাস আসবে না, তাই বাড়তি দাম দিয়ে গোখাদ্য কিনে গরুকে খাওয়াতে হবে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তারপরেও গরু বিক্রি করতে গেলে দাম কম। তবে শফিয়ার রহমান নামে এক খড় (বিচালি) ব্যবসায়ি বলেন, মনিরামপুরে জলাবদ্ধতার কারনে খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই আমরা বাইরের উপজেলা থেকে বেশি দামে খড় সংগ্রহ করে এলাকায় ৮ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত কাউন বিক্রি করছি। তাতেও আমাদের গাড়ি খরচ দিয়ে সীমিত লাভ হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে খামারিদের আমন ধানের খড় পচে নষ্ট হওয়ায় গরুর শুকনা খাদ্যের একটু সংকট দেখা দিয়েছে। আর বাজারে দানাদার খাবারের মূল্য ন্যায্যতার বাইরে নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা বিভিন্ন বাজারের গোখাদ্যর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারিতে রয়েছে। ঘাস চাষসহ বিভিন্ন উপায়ে পশু পালনের স্বার্থে খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।