রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) :
যশোরের মনিরামপুর পৌর শহরের মোজাফ্ফর হোসেন (৪২) নামের এক ক্ষুদ্র গার্মেন্টস ব্যবসায়ী গত ৪ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি নিখোঁজ নাকি অপহরণের শিকার হয়েছেন, তা নিয়ে নানা মহলে গুনজন চলছে। পরিবারের দাবি বন্দোবস্ত নেওয়া কোটিপতি ব্যবসায়ীর সাথে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোজাফ্ফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন গত ২৬ জানুয়ারী থানায় জিডি করেছেন। যার জিডি নং-১৩৩২।
মোজাফ্ফরকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেন আরেক প্রভাবশালী কোটিপতি বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন। নিখোঁজ মোজাফ্ফরকে জায়গা ছেড়ে দিতে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছিল। নিস্তার পেতে বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেন মোজফ্ফর হোসেন । সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এস আই আলমগীর হোসেন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।
জানা যায়, মোজাফ্ফর হোসেন পৌর এলাকার কামালপুর গ্রামের জয়নাল আলী মোড়লের ছেলে। তিনি গত ২৫ বছর ধরে উর্ম্মি গার্মেন্টস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছিলেন। গেলো বছর তার (মোজাফ্ফর হোসেনের) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লাগোয়া একই বাজারের আরেক কোটিপতি বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন নানা মহলকে ম্যানেজ করে সরকারি ১ খতিয়ানের জমি বন্দোবস্ত নেন। অভিযোগ রয়েছে মোজাফ্ফর হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন মোশারফ হোসেন। এ নিয়ে কয়েক দফা শালিসী সভা হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর মোশাররফ হোসেন ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে মোজাফ্ফরকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নেয়। পরে পৌর শহরের সামনে ফের শালিসী সভা হয়। এরপর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে বন্ধ করে আর বাড়ি ফেরেননি তিনি।
সূত্র জানায়, পৌর শহরের ১০০ নং-দূর্গাপুর মৌজায় সরকারি এক খতিয়ানের ১৪০ দাগের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের দুই শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেয় বস্ত্র ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন। জমির ফ্রন্ট পাশে রয়েছে নিখোঁজ মোজাফ্ফর হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একই সারিতে ইয়ারুল হোসেন ও জাফর হোসেনেরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রোজগারেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। মোশাররফ হোসেন জমি বন্দোবস্ত নিয়েই এই তিন ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। মোশাররফ হোসেন কাজে লাগান ক্ষমতাসীন দলের একটি মহলকে। তাদের অব্যাহত হুমকিতেও নড়েননি এই তিন ব্যবসায়ী। এ নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি মোশাররফ হোসেনের সাথে মোজাফ্ফরের বাকবিতন্ড হয়। মোজাফ্ফরকে উঠিয়ে নিয়েও হুমকি দেওয়া হয়। পরে গত ১৭ জানুয়ারি মোজাফ্ফর পাশের এক ব্যবসায়ীকে নিয়ে থানায় গিয়ে মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। যার তদন্তকারি কর্মকর্তা হন থানার এসআই আলমগীর হোসেন। তিনি এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
মোজাফ্পরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, তার স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে উঠে-পড়ে লাগেন মোশাররফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। এর আগে মোশাররফ হোসেন দুই বার লোকজনকে দিয়ে তার স্বামীকে উঠিয়ে নেয়। সর্বশেষ তিনি গত ২৬ জানুয়ারি থানায় একটি জিডি করেছেন। তার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাবুল রহমান জানান, মনিরামপুর বাজার বস্ত্র ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মোশাররফ হোসেন লোকজন দিয়ে তাকে অপহরণ করিয়েছেন বলে অনেকেই মনে করছেন। এর আগেও দুই দফা মোজাফ্ফরকে উঠিয়ে নিয়ে যায় তার ভাড়াটিয়া লোকজন।
মোজাফ্ফরের নিখোঁজের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে মোশাররফ হোসেন বলেন, জমি বন্দোবস্ত নিতে তার বহু টাকা ব্যয় হয়েছে। কয়েকজনের জন্য তিনি ঘরে উঠতে পারছেন না। অভিযোগের তদন্তকারি কর্মকর্তা থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযোগ তদন্তের অনুমতি পেতে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মধুমেলায় দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি এ ব্যাপারে খোজ নিতে পারেননি।
থানার ওসি শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তার জানা ছিল না। নিখোঁজ মোজাফ্ফরকে উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই ও ডিবি পুলিশ কাজ করছে।