মণিরামপুর( যশোর)প্রতিনিধি :
আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকলে বোরো ধানের আবাদে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এবার মণিরামপুরে। দক্ষিণের বাতাসে যেন সবুজ মাঠ দুলছে। চাষিরা যে যতটুকুই জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছে, তা যেন স্বপ্ন পূরণ হবে এবার তাদের। ধানের বাজারদর ভালো, পিছিয়ে নেই বিচালির মূল্যও।
আম্রঝুটা গ্রামের মকবুল হোসেন এ বছর ৪২ শতক বিঘার ৫ বিঘা জমিতে এবার বোরো ধানের চাষ করেছেন। প্রতিমণ ধান এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১’শ টাকা। তার হিসাব মতে একবিঘা জমিতে ৩০ মণ ধান এবং ১৮ হাজার টাকার বিচালি বিক্রি হবে। সব মিলিয়ে সুষ্ঠ পরিবেশে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারলে ধান-বিচালিতে চাষি পাবে ৪৮ হাজার টাকা কমপক্ষে।
অনুরুপ হিসাব দিলেন মাছনা গ্রামের বোরো চাষি শাহজাহান আলী ও কাড়িয়াড়া গ্রামের মতলেব গাজী। আম্রঝুটা গ্রামের চাষি আব্দুস সামাদ জানান, এ বছর উপজেলার মাঠে মাঠে বোরো ধান চাষিদের আশানুরুপ হয়েছে। এ কারনে চাষিদের মনে আনন্দ এবং শংকা দুটিই রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় মোট ২৭ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ৩৬ হাজার ৪’শ ৭৮ হেক্টর মোট বোরোচাষ জমি থাকলেও স্থায়ী জলাবদ্ধার কারনে ৪’শ হেক্টর জমিতে চাষিরা এ বছর বোরো আবাদ করতে পারেনি। তবে, মণিরামপুরের বোরো ধানের আবাদে এবার শীর্ষে রয়েছে উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ন। আর সব থেকে পিছে পড়েছে উপজেলার কুলটিয়া ও নেহালপুর ইউনিয়ন দু’টি।
মণিরামপুরে ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৭ হাজার ৫’শ হেক্টর বোরো ধানের আবাদের মধ্যে রোহিতা ইউনিয়নে ১৬’শ ৩০, কাশিমনগর ৯’শ ৫৫, ভোজগাতী ৭’শ ৫৪, ঢাকুরিয়া ১৮’শ ৭০, হরিদাসকাটি ১৭’শ ১০, মণিরামপুর ৬’শ ৯৫, পৌরসভা ১ হাজার ৬০, খেদাপাড়া ২৩’শ ২০, হরিহরনগর ১৭’শ ২, ঝাঁপা ২২’শ ৬০, মশ্মিমনগর ১৮’শ ৫০, চালুয়াহাটী ১৭’শ ৭০, শ্যামকুড় ১৮’শ ৮৩, খানপুর ১৮’শ ২০, দূর্বাডাঙ্গা ১৮’শ ৮০, কুলটিয়া ৫’শ ৬০, নেহালপুর ৮’শ ৯৫ ও মনোহরপুর ইউনিয়নে ১২’শ ৯০ হেক্টার জমিতে এবারে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে।
খেদাপাড়া ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বেশি বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে এই ইউনিয়নটিতে। ২৩’শ ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করা প্রত্যেকটি গ্রামের খাল-কুড়, মাঠঘাট, বিল এবং পতিত জায়গার ধানগাছগুলো সমানতালে কুশি গজিয়েছে এবং দুলছে। দেখলে যেন মনে হচ্ছে বোরো ধানে মণিরামপুরের দিগন্তজুড়ে মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে সবুজের সমারোহ।
উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার জানিয়েছেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে বিল কপালিয়ায় ৬০, কুমারঘাটা বিলে ৭০, বিল বোকড় ও কেদারিয়ায় ১৬০, কুড়ামার ও হরিণা বিলে ১১০ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকরা তাদের জমিতে বোরো চাষ করতে পারেনি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এরপরও আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশ থাকলে মণিরামপুরে এ বছর বোরো ধানের আবাদ আতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।