মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার বন্ধ দীর্ঘদিন। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার ও ওষুধ সরবরাহ থাকলেও চিকিৎসক সংকটে অপারেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ। নামমাত্র সপ্তাহে একদিন অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও নানা কারণে সেটাও বন্ধ থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে রোগী নিয়ে ছুটতে হচ্ছে স্বজনদের। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সুবিধা না পেয়ে রোগী নিয়ে যেসব ক্লিনিকে ছুটছেন স্বজনরা সেগুলোও মানহীন। সেখানেও থাকে না কোনো সার্জন কিংবা অ্যানেসথেসিয়া। ক্লিনিক মালিক নিজেই সার্জন সেজে চালান অস্ত্র। ফলে বাড়ছে মা ও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি।
এদিকে চিকিৎসক সংকটে মণিরামপুর হাসপাতালে অস্ত্রপচার না হলেও নিয়মিত এ কাজের জন্য লাখ লাখ টাকার ওষুধ কিনছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সেসব ওষুধ কোথায় যাচ্ছে তা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। সাধারণত উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছোটখাটো টিউমার, অ্যাপেনডিক্স ও সিজারের রোগীর অপারেশন হয়ে থাকে। এ কাজের জন্য একজন অ্যানেসথেসিয়া, একজন সহকারী সার্জন, একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ ও একজন সহকারীর প্রয়োজন হয়। মনিরামপুর হাসপাতালে কখনো অ্যানেসথেসিয়া ছিল বলে জানা যায় না।
সহকারী সার্জন থাকায় একসময় অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হতো এ হাসপাতালে। সেটাও বন্ধ প্রায় পাঁচ বছর। গাইনি বিশেষজ্ঞ থাকায় দুই বছর আগেও সপ্তাহে এখানে দু’দিন সিজার হতো। সেটাও এখন ঠিকমত হয় না। হাসপাতালে খোঁজ-খবর নিয়ে জানাগেছে, গত ছয় মাসের মধ্যে চলতি মাসে দুটি ও অন্য মাসগুলোতে একটি করে সিজার হয়েছে। এখানে অ্যানেসথেসিয়া, সহকারী সার্জন ও গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই বহুদিন। আগে সপ্তাহে দুই দিন সিজার হতো। এখন বাইরের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এনে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার সিজারের কার্যক্রম চালু আছে। চিকিৎসক না আসায় অনেক সময় সেটাও হয় না।
এদিকে হাসপাতালে সিজার বা অপারেশেন ঠিকমতো না হওয়ায় মণিরামপুরে মুন হসপিটাল, মনোয়ারা ক্লিনিক এবং রাজগঞ্জে মর্ডান হসপিটাল সুযোগটি লুফে নিয়েছে। কোনো অ্যানেসথেসিয়া, সহকারী সার্জন বা গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকলেও রোগীদের ঠকিয়ে দেদারসে এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে নানা অপারেশন।
মুন হসপিটাল ও মনোয়ারা ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই সার্জন না হয়েও নিজেই দুই প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রোপচার চালাতেন। একই কাজ চলে উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের মর্ডান হসপিটালেও। প্রতিষ্ঠান তিনটির কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আগেই মুন হসপিটাল বন্ধ করা হয়েছে। আর গেল সপ্তাহে আব্দুল হাই নিজেই সার্জন সেজে অস্ত্রোপচার করা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা পড়েন। তখন ক্লিনিকটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।
এ ছাড়া ৭-৮ মাস আগে মর্ডান হসপিটালে অভিযান চালিয়ে তাদেরও অস্ত্রোপচার ও রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেন তিনি। যদিও আদেশ না মেনে একই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন হসপিটালটির মালিকপক্ষ। মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া, সহকারী সার্জন ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) একজন অ্যানেসথেসিয়া যোগদান করেছেন।