জাতীয় ডেস্ক:
দীর্ঘদিন বাবার বাড়িতে বেড়ানোর পর স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় ফিরছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের নবীয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা আরজু মিয়ার মেয়ে হোসনা আক্তার। তার সঙ্গে ছিল তার সাড়ে তিন বছরের সন্তান মো. হোসাইন মিয়া এবং স্বামী জুনায়েদ হোসেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় হোসনা আক্তার মারা গেলেও বেঁচে যান তার স্বামী ও তিন বছরের সন্তান মো. হোসাইন।
সেদিনের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বামী জুনায়েদ হোসেন জানান, ভৈরব জংশনে পৌঁছানোর পর ট্রেনের ইঞ্জিন ঘোরানো হয়। এরপর ট্রেনটি ভৈরব থেকে যাত্রা শুরুর পর হঠাৎ তাদের ট্রেনে প্রচণ্ড জোড়ে ধাক্কা লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে তার শিশু সন্তান জুনায়েদকে হতে ধরতে পারলেও ট্রেনের কামড়ার অপর প্রান্তের বসে থাকা তার স্ত্রী হোসনাসহ ট্রেনের ওই অংশটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিষয়টি কাঁদতে কাঁদতে বলেন জুনায়েদ বলেন, ‘চোখের সামনে স্ত্রীর দেহ ছিন্নভিন্ন হতে দেখেছি। কিছুই করতে পারিনি। এ সময় ধাক্কা সামলাতে এক হাত দিয়ে সন্তান ও অপর হাত দিয়ে শ্যালককে চেপে রাখি।’
এদিকে নিজের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় দিশেহারা হোসনার বাবা আরজু মিয়া। স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বিদায় নিতে গিয়ে তার মেয়ে চির বিদায় হয়ে গেল, এমন দুর্ঘটনা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। মেয়েকে হারানোর বেদনার সঙ্গে যুক্ত হলো তার সাড়ে তিন বছরের নাতি হোসেনের মা হারানোর বেদনা। ছোট্ট শিশুটি তার মাকে হারিয়ে প্রতি রাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সারাদিন অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটলেও রাতে ঘুমানোর সময় মাকে না পেয়ে কান্না করতে করতে দুর্বল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু হোসাইন। মায়ের কথা জানতে চাইলে তার মা ঘুমিয়ে আছে বলে সান্ত্বনা দেন তার নানা-নানি।
নিহত নান্দাইলের হোসনা আক্তারের পরিবারের অভিযোগ, তার পরনে ঘড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্বর্ণের গয়না ছিল যা দুর্ঘটনার পর মরদেহের সঙ্গে তা আর পাওয়া যায়নি। যাদের অবহেলা ও গাফিলতিতে এমন দুর্ঘটনা হয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।