হোম অর্থ ও বাণিজ্য ‘ভালো ব্যবসায়ীরাও অর্থ পাচারে উদ্বুদ্ধ হবেন’

বাণিজ্য ডেস্ক :

কানাডার বেগমপাড়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরানো যাবে বিনা প্রশ্নে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের জন্য এমন সুযোগ রেখেছে সরকার। তবে অর্থ আনতে দিতে হবে নামমাত্র কর। সরকারের এমন ঘোষণার বিরোধিতা করে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, পাচার হওয়া অর্থ এভাবে ফেরত আনলে তৈরি হবে নতুন নতুন পাচারকারী।

অর্থ পাচার-কাণ্ডে বর্তমানে দেশ-বিদেশে সবচেয়ে আলোচিত নাম পি কে হালদার। ভারত-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি।

এর বাইরে ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় সোয়া চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

বিপুল এই অর্থ দেশে ফেরাতে পাচারকারীদের দায়মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাব করেন, বিদেশে ইতোমধ্যে যারা সম্পদ গড়েছেন, বিনা প্রশ্নে সেই টাকা তারা দেশে আনতে পারবেন। তবে বাড়ি-গাড়ির মতো স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স আকারে পাঠানো নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ কর দিতে হবে। এ সুবিধা আগামী ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশগুলো মানি লন্ডারিং আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে। এ অবস্থায় অর্থ দেশে ফেরাতে চান পাচারকারীরা। তাদের সুবিধা দিতেই এমন ঘোষণা বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ।

তবে এ সুযোগকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এতে অর্থ পাচারে ভালো ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান তারা।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সাবেক সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার মনে হয়, যারা টাকা পাচার করে, এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার তাদের উৎসাহিত করল।’

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘পাচার করা টাকা দেশে আনতে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। এদিকে আমরা যারা দেশে ব্যবসা করছি, তাদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়। তার মানে, অর্থ পাচারকারীদের ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়েছে। এ ধরনের পলিসি হলে ভালো ব্যবসায়ীরাও অর্থ পাচারে উদ্বুদ্ধ হবেন।’

বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ বহু আগে থেকেই দিয়ে আসছে সরকার। তবে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে এ ধরনের সুযোগ এবারই প্রথম।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন