হোম জাতীয় ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে যা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 108 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

দ্বিপক্ষীয় তিন দিনের সফরে ৭ ফেব্রুয়ারি ভারত গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। প্রথম দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। আর শেষদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর এবং রাজ্যসভার লিডার অভ দ্য হাউস এবং বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন হাছান মাহমুদ। এ সময় দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।

সফরের দ্বিতীয় দিন দিল্লির রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত সৌধে শ্রদ্ধা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নয়াদিল্লির বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের এক দশক’ শীর্ষক সভায় বক্তব্য দেন। প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়া এবং ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দিল্লি থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন আয়োজিত অভ্যর্থনায় সুশীল সমাজ প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপও করেন তিনি।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংলি এবং ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েন্টসিলের সৌজন্য সাক্ষাত শেষে দিল্লি সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেন মন্ত্রী। তিনি জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের বদলে ‘নন-লেথাল উইপন’ ব্যবহার, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ করে ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তি নবায়ন, তিস্তার পানিবণ্টন, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’

ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কাজ চলছে।’

ভারত থেকে পণ্য আমদানির বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেনন, ‘৯ ফ্রেবুয়ারি দিল্লিতে ভার‌তের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযুষ গয়ালের স‌ঙ্গে বৈঠকে রমজানের আগে ভারতকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং ১ লাখ টন চিনি রফতানি করতে অনুরোধ করেছি। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী সেটা ভালোভাবে নিয়েছেন। এর আগে তারা ২০ হাজার টন পেঁয়াজ ও ১০ হাজার টন চিনি রফতানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।’

‘আমরা অনেক ভোগ্যপণ্যের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে পেঁয়াজ, চিনি, ডাল এসব এবং মসলা জাতীয় কিছু পণ্য আমদানি করি। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমি তাকে বলেছি, এসব ভোগ্য পণ্যে যেন বিশেষ কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যাতে কমপক্ষে আমরা এসব পণ্য সঠিক মূল্যে এবং আমাদের প্রয়োজনে আমদানি করতে পারি,’ যোগ করেন তিনি।

মিয়ানমার থেকে তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে জাহাজ আসার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাহাজটি কখন ভিড়বে সেটি টেকনিক্যাল পার্ট। আমরা সম্মত তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এটা খুব সহসা হবে।’

মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও তাদের সঙ্গে কিছু সেনা সদস্যও এসেছেন, তারা রোহিঙ্গা গণহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা সেটি তদন্ত করার দাবি উঠেছে এমন প্রশ্নের হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আপাতত তাদের ফেরত পাঠানো নিয়েই কাজ করছি। কারণ সেটিই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার এবং মিয়ানমারও তাদের নিয়ে যেতে চায়।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য আরাকান আর্মি দখল করেছে, বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তে তারা টহল দিচ্ছে সেটি দেশের নিরাপত্তা নিয়ে সংকট তৈরি করবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের নিরাপত্তা চৌকি কে পাহারা দিচ্ছে সেটি তাদের একান্ত ব্যাপার। আমাদের এখানে তাদের মর্টারশেল এসে পড়েছে, দুজন নিহত হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

রাখাইনের রাজধানী সিত্তে থেকে বাংলাদেশ কনসুলেটের কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিএনপি বলেছে মিয়ানমার ইস্যুতে সরকার তথ্য গোপন করছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো বক্তব্য দিয়ে তাদের দলের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। এখানে মিয়ানমারের যতজন সদস্য আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে সে বিষয়ে আমরা সময়ে সময়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছি। এখানে লুকোচুরির প্রশ্নই আসে না। তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি খুব সহসা তাদের ফেরত পাঠাতে পারবো।’

নাফ নদীর তীরে অনেক রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য বর্ডার খুলে দেয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে রোহিঙ্গা আছে ১.২ মিলিয়ন। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন পরিবেশগত সমস্যা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, মাদকজনিত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা। আমাদের পক্ষে কী আরও রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া সম্ভব? আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়েই সংঘাত চলছে তা নয়। তাদের মধ্যে নানা জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের মধ্যে নানা সমস্যা চলছে। সেই সংঘাতের উত্তাপের কারণে আমাদের দেশে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়বো সেটি কি সঙ্গত?’

মিয়ানমার ইস্যুতে ভারত সফরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে এখন যে সংঘাত চলছে, এর কারণে আমাদের অঞ্চলে যে সংকট তৈরি হয়েছে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হয়েছে তাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে সেখানে ফেরত নেয়ার বিষয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছি।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন