হোম রাজনীতি ভারত আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন ঠেকালেও সরকারের পতন অনিবার্য: রিজভী

রাজনীতি ডেস্ক:

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী লীগ লুটেরা-ডাকাতের দলে পরিণত হয়েছে। তারা গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন-রাষ্ট্রযন্ত্র সবকিছু ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশকে দেউলিয়া ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে অবৈধ সরকার।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা সবাইকে অপকর্মযজ্ঞের অবারিত সুযোগ ও উৎসাহ দিয়ে অপরাধী বানিয়ে তার অবৈধ ও পাতানো একতরফা নির্বাচন করাতে বাধ্য করছেন। তবে তাদের ভোটাধিকার-লুটপাট-অর্থ পাচার, অপকর্মের কথা কেউ বললেই তার ওপর আওয়ামী চক্র সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কাউকে মামলা দিয়ে, পুলিশ দিয়ে, কাউকে দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে শায়েস্তা করা হচ্ছে। কোনো কিছু না করতে পারলে মিথ্যা অপবাদ-গালিগালাজ দিয়ে অপদস্থ করা হচ্ছে।

সত্য প্রকাশ করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ডামি নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে কোন কোন লুটেরা শত শত কোটি টাকা-সম্পদের পাহাড় গড়েছে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই সত্য প্রকাশ করায় আঁতে ঘা লেগেছে নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী-এমপি-লুটেরা চক্রের। এতেই যেন পিত্ত জ্বলে গেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ২৩ ডিসেম্বর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) রিপোর্টে ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, এটি আংশিক চিত্র। প্রকৃত তথ্য আরও ভয়াবহ। এ টাকার বড় অংশই বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এগুলো আর ব্যাংকে ফেরত আসবে না।

এই সত্য প্রকাশ করায় মাফিয়া সরকারের মুখপাত্র ওবায়দুল কাদের খেপেছেন। তার মানে, লুটপাটের দালিলিক সত্য তথ্য প্রকাশ করলেও রেহাই নেই। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা কারা লুটপাট ও পাচার করেছে, সেই তথ্য দেশের জনগণ জানলেও কাদের সাহেবরা হুমকি দিচ্ছেন ও ভন্ডামী করছেন। টাকা পাচারকারীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। তিনিও কি এ চক্রের সদস্য? তা না হলে তার এত জ্বলে কেন?

‘এই টাকা দিয়ে কানাডায় বেগম পাড়া, আমেরিকায় বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসা, দুবাই-সিঙ্গাপুরে বিনিয়োগ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ তিন মহাদেশে সম্পদের পাহাড় গড়া হয়েছে। সুইচ ব্যাংকে নতুন নতুন অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। আওয়ামী লুটেরাদের দেশে বহুতল বাড়ি, বিলাসী গাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাপনে জৌলুস উপচে পড়ছে। আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। আর সাধারণ মানুষ ফতুর হয়ে খেয়ে না-খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে,’ যোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, কেউ সত্য কথা বললে বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেলেই কাদের সাহেবরা তাকে বিএনপি-জামায়াত-রাজাকার বলে ট্যাগ দেন। যারা সত্য কথা বলবে তারাই বিএনপির লোক। আর তাদের অনাচার ও দুর্নীতির পক্ষে গেলে সে হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোক, ভালো মানুষ।

দেশের ১৮ কোটি মানুষ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই বিরোধী দলহীন একদলীয় নির্বাচন ঘিরে আতঙ্কে ভুগছে মিডনাইট ভোট ডাকাত আওয়ামী সরকার। তাদের দুশ্চিন্তা এখনও কাটেনি। কিছুদিন ধরে ওয়ান-ইলেভেনের আতঙ্কের কথা বলছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ নয়, প্রতিবেশী দেশ দাবি করে রিজভী বলেন, নির্বাচনহীন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে ভারত। ওয়ান-ইলেভেন থেকে উত্তরণ, প্রশ্নবিদ্ধ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর কাহিনি তৎকালীন ভারতের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস’ গ্রন্থে বিবৃত রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবারও ৭ জানুয়ারির দলহীন নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রতিবেশী দেশটির ভূমিকা উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভারত আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন ঠেকালেও ১৮ কোটি জনগণের রুদ্ররোষ থেকে আওয়ামী লীগ পার পাবে না। এই পরগাছা, পরজীবী, আর্টিফিশিয়াল সরকারের পতন অনিবার্য।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন