হোম খুলনাযশোর ভবদহে শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় অথৈ পানি আর পানি! যশোর-খুলনার দুঃখ ভবদহে আবারও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা!

ভবদহে শতাধিক গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় অথৈ পানি আর পানি! যশোর-খুলনার দুঃখ ভবদহে আবারও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 13 ভিউজ

মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:

যশোর-খুলনার দুঃখ ভবদহে আবারও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণে ভবদহের প্রায় শতাধিক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ সব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগের কবলে পড়ে পরিবার-পরিজন ও গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অতিবৃষ্টি জনিত কারণে ভবদহের বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চলে এখন অথৈ পানি আর পানি! পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে ভবদহ পাড়ের নতুন কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া ভবদহের বিলকেদারিয়ার ভেড়িবাঁধ ভেঙে যেয়ে নতুন করে কয়েকটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার অধিকাংশ রোপা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে,অন্যান্য ফসলাদি বিশেষ করে বিভিন্ন জাতের সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। মৎস্য ঘের, পুকুর-ডোবা ভেসে গেছে প্রায় ৫ সহস্রাধিক। প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও জানানো হয়নি। তবে মাছের ঘের,পুকুর-জলাশয় ভেসে,রোপা আমন ধান ও সব্জির ক্ষেত ডুবে যেয়ে শত কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে,গত এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণে মণিরামপুর উপজেলার বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, বিল খুঁকশিয়া,বিল কপালিয়া,আড়পাতার বিল, ঝিলদহের বিলসহ ভবদহের বিভিন্ন বিলাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। এছাড়া যশোর সদর,অভয়নগর,কেশবপুর উপজেলা ও খুলনার ডুমুরিয়া,ফুলতলা উপজেলার বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে ডুমুরতলা, আন্ধা, বারান্দী, দিঘলিয়া, কোটা, রাজাপুর, সুন্দলী, ভাটবিলা, সড়াডাঙ্গা, হরিশপুর, ফুলেরগাতি, দামুখালী, দত্তগাতি, জিয়াডাঙ্গা ও হাটগাছা, কুলটিয়া, সুজাতপুর, লখাইডাঙ্গা, মহিষদিয়া, আলীপুর, পোড়াডাঙ্গা, পদ্নানাথপুর, পাড়িয়ালী, দহাকুলা, কুচলিয়া, নেবুগাতি, পাঁচকাটিয়া, ভুলবাড়িয়া, কুমারসীমা, বালিধা, পাঁচাকড়ি, নেহালপুর,কপালিয়া, মশিয়াহাটি গ্রামসহ অন্তত ১০০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকার অধিকাংশ মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এলাকার বেশীরভাগ বসতবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভবদহ অধ্যুষিত যশোরের মণিরামপুরসহ অভয়নগর,কেশবপুর, যশোর সদর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার বহু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত-ভুক্তভোগী অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ, ভবদহের বিলাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ভবদহে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যা পরর্বতীতে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়।

তাছাড়া ভবদহের জলাবদ্ধতার শিকার ভুক্তভোগী মানুষের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘবে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিলাঞ্চলে পরিকল্পিত জোয়ার আধার প্রকল্পের দাবি আজও উপেক্ষিত রয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। জনগণের একটিই কথা ভবদহ অঞ্চলের বিলসমূহে পর্যায়ক্রমে টিআরএম (টাইটাল রিভারস ম্যানেজমেন্ট তথা জোয়ার আধার প্রকল্প) চালুর মাধ্যমে ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব। টিআরএমকে উপেক্ষা করে নদীখনন,পলী অপসারণ,বাধঁনির্মাণসহ বিভিন্ন সময়ে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট গ্রহণ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং এসব প্রজেক্টে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।

ভবদহ অঞ্চলের ভুক্তভোগী জনগন ভবদহের স্থায়ী সমাধানে আবারও বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। গত বুধবার(১৮ সেপ্টেম্বর) মণিরামপুর উপজেলার মশিয়াহাটী ডিগ্রি কলেজ মাঠে পানির মধ্যে অবস্থান নিয়ে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি ভবদহে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমস্যা সমাধানসহ লুটেরা সিন্ডিকেটের বিচারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে।

সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘ ৪৪ বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। এই জনপদে ভবদহ স্লুইসগেট একটি মরণ ফাঁদ। ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে শ্রী, হরি ও টেকা নদীতে পলী অপসারণে খনন কাজ করা হচ্ছে। টেকা নদীতে যখন এ খননকাজ চলছে, তখন শ্রী ও হরি নদী ভরে উঠছে পলিতে। আবার টেকা নদীতে যেটুকু খনন করা হচ্ছে, সাগর থেকে জোয়ারের সঙ্গে উঠে আসা পলি ও খননের মাটি পড়ে আবার নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘদিনের পরিক্ষীত ও গ্রহণযোগ্য প্রকল্প জোয়ারাধার (টিআরএম-টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বর্তমানে ভবদহের কোন বিলে কার্যকর নেই। এ অবস্থায় ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীতে ব্যাপক হারে পলি জমে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ভবদহ স্লুইচ গেটের ২১ কপাটের (ভেন্ট) উজান ও ভাটিতে শ্রী নদীতে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেছে। ফলে ভবদহ এলাকার বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।

আন্দোলনকারী ও ভুক্তভোগীরা তাই ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে টেকসই কার্যকর প্রকল্প গ্রহণের দাবী জানান। পাশাপশি অতিতে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসেন গৃহীত প্রকল্পের লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবী জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন