হোম খুলনাযশোর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন: সুস্থ্য হয়নি মনিরামপুরের আহাদ ও সৌমেন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন: সুস্থ্য হয়নি মনিরামপুরের আহাদ ও সৌমেন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 25 ভিউজ

রিপন হোসেন সাজু:

আহাদের বুলেট বিদ্ধ চোখ ৫ম বারের মত অপারেশন করা হলেও কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। এ পর্যন্ত চোখের অপারেশন করতে তাদের প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পৈত্রিক জমি বিক্রি করে চলছে তার ভাইয়ের চিকিৎসা। মাত্র ২০ দিন আগে জুলাই ফাউন্ডেশন হতে চিকিৎসা বাদ এক লাখ টাকা দেয়া হয়। এর আগে কিংবা পরেও আর কেউ খোঁজ নেয়নি আহাদের অভিযোগ তার স্বজনদের। আহাদ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার এক বুক আশা নিয়ে ঢাকার একটি কোচিং-এ ভর্তি হন তিনি। থাকতেন ঢাকার মালিবাগ এলাকায়। আহাদ হোসেনের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু তাদের হাসি কান্নায় রুপ নিয়েছে কান্নায়। মা রাজিয়া বেগম ভবিষ্যত আর যন্ত্রনায় ছটফট করা ছেলের রোগমুক্তি নিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। বর্তমানে বড় ভাইয়ের বাসাতে চোখ, শাথা আর দাঁতের যন্ত্রনায় দিন-রাত কাতরাচ্ছেন আহাদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আহাদ হোসেন গত ৫ আগস্ট মিছিলে সামিল হলে চোখে বুলেট বিদ্ধ হন। সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মিছিল রামপুরা এলাকায় পৌছাতেই পুলিশ তাদের শান্ত থাকতে বলেন। তারা শান্ত হয়ে বসে থাকতেই হঠাৎ রাবার বুলেট তার বাম চোখে এসে লাগে। তিনি আর কিছুই দেখতে পান না। চিকিৎসকরা সেইদিন জানিয়েছিলেন আহাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। স্বজনরা আহাদ হোসেনের চিকিৎসা ও সুস্থ্যতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কিছুটা ক্ষোভ করেই আহাদ হোসেন বলেন, তাদের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও এখনো কেউ তার খোঁজ নেয়নি। অনেকেই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। তিনি কি এই জন্য জীবন বাজি রেখে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছেন? এমন প্রশ্ন ছুঁেড় দেন। আহাদ হোসেনের বড় ভাই মুরাদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট বুলেট বিদ্ধ হবার দিনই আহাদকে ঢাকার খিদমাহ চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আহাদের চোখ জটিল পর্যায় থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশন করেনি। পরে নেয়া হয় ভিশণ চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে ৫ বার চোখের অপারেশন করা হয়েছে। কিন্তু চোখে দেখাতো দূরের কথা; যন্ত্রনাই কমেনি। তার ভাইয়ের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পৈত্রিক জমি বিক্রি করে চলছে ভাইয়ের চিকিৎসা। ২০ দিন আগে জুলাই ফাউন্ডেশন হতে তাকে এক লাখ টাকা দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, কর্ণিয়া বিশেষজ্ঞ ডাঃ মনিরুজ্জামান ও ডাঃ মাসুদ হাসানের তত্ত¡াবধায়নে চলছে তার ভাইয়ের চিকিৎসা। চিকিৎসকদ্বয় জানিয়েছেন, আহাদের বাম চোখের কর্ণিয়া, লেন্স ও রেটিয়া নষ্ট হয়ে গেছে। গুলি চোখ ভেদ করে মাথার ভিতরের একটি শিরায় স্পর্শ করেছে। এ কারনে অপারেশন করে কোনভাবেই গুলি বের করা সম্ভব হচ্ছে না। আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে মুরাদ হোসেন জানান, গত সোমবার আহাদের ৫ম বারের মত অপারেশন করা হয়েছে। কিন্তু তার ভাইয়ের যন্ত্রনার আর্তনাদ কিছুতেই উপশম হচ্ছে না। দিন-রাত যন্ত্রনায় চিৎকার করছে। বর্তমানে আহাদের মাথার বাম পার্শ্ব এবং দাতের চোয়াল ফুলে যাচ্ছে। তার ভাইকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরীতে যোগদানের ৪দিন পরেই কোমরে গুলিবিদ্ধহন সৌমেন মন্ডল। ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলায় ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে সামিল হন তিনি। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মার মূখে হাসি ফুটানোর আশা নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সৌমেন মন্ডল যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের শিক্ষক দম্পতি পশুপতি মন্ডল ও রমা রানী মন্ডলের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন তিনি। সেখানে অনার্স শেষ করেন। এরপর চলতি বছর জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌমেন মন্ডল বলেন, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মা নামাজের পরেই ছাত্রজনতার মিছিলে এলাকায় উত্তাল হয়ে পড়ে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুরের বসিলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা মিছিল বের করে। তিনি ওই মিছিলে যেতেই পুলিশের আক্রমনের শিকার হন। তিনি আরও বলেন, ওপর হতে হেলিকপ্টার হতে মিছিলে গুলি করা হচ্ছিল। আর নিচ থেকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। তিনি কিছু বুঝে উঠার আগেই উরুরতে কিছু একটা লেগেছে বলে অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ পর দেখতে পান তার পরিহিত প্যান্ট রক্তে লাল হয়ে গেছে। পরে ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পান উরুতে গুলি লেগে নাভির নিচ দিয়ে বের হয়ে গেছে গুলি। উরুর হাড় ভেঙ্গে গেছে। বাবা-মা চিকিৎসা করিয়ে এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। তিনি চিকিৎসার জন্য কোন টাকা পাননি। সৌমেনের শিক্ষক দম্পতি বাবা-মামা বলেন, অর্থের দিকে না তাকিয়ে নিজেরা কষ্টে চলে দুই সন্তানের মধ্যে বড় সৌমেনকে ইঞ্জিনিয়ার করার আশায় ঢাকায় ভর্তি করেন। ছেলেটা ভাল হয়ে আর দশ জনের মত স্বাভাবিক হাটাচলা করতে পারে-এজন্য দেশবাসীর কাছে আশির্বাদ কামনা করেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন