রাজনীতি ডেস্ক:
নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, বাড়ছে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ। এক রকম নাওয়া-খাওয়া ভুলে ধরনা দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারি দফতরে; জ্ঞান বিতরণ করছেন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে।
একই চিত্র দেখা গিয়েছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে। সে সময় ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন ড্যান মজিনা। আর এক এগারোর সরকারের পেছনের কুশীলব হিসেবে প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিসের কলকাঠি নাড়ার বিষয়টি অনেকটাই ছিল ওপেন সিক্রেট।
দেশের চলমান রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের থেকেও বেশি আলোচিত নাম পিটার হাস। মার্কিন এ রাষ্ট্রদূত গত বছর মার্চে ঢাকায় দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেখাতে শুরু করেন তার আগ্রহ। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসছেন তিনি; কথা বলছেন নির্বাচন ইস্যুতে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই তোড়জোড় চলছে মার্কিন দূতাবাসে। গত আগস্টে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পিটার হাস। তবে এর চেয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গেই বেশি যোগাযোগ তার এবং মার্কিন দূতাবাসের।
গত জুনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ হয় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের। এছাড়াও কয়েক দফায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন পিটার হাস। গত ২৬ অক্টোবর বিএনপিপন্থি এক ব্যবসায়ীর বাসায় নৈশভোজেও অংশ নেন তিনি।
এছাড়াও জুন ও আগস্ট মাসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুদফা সাক্ষাৎ করে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও যোগযোগ রেখে চলেছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। গত ২৬ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের ফাস্ট সেক্রেটারি ম্যাথিউ বে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। নির্বাচনের আগে মার্কিন দূতাবাসের কাছ থেকে এ অতি গুরুত্ব পেয়ে অবাক জামায়াত নেতাও।
পাশাপাশি নিয়মিত নির্বাচন কমিশনে যাতায়াত রেখেছেন পিটার হাস। জুন, আগস্ট এবং অক্টোবর – এ মাসগুলোতে তিন বার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। সবশেষ ৩১ অক্টোবর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগিদ দেন তিনি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভূমিকার কারণে তাকে ত্রাণকর্তা হিসবে দেখছে বিরোধী দলগুলো। এর মধ্যেই পিটার হাসকে ‘ভগবান’ উল্লেখ করে রক্ষা করার আবেদন জানান বিএনপির এক নেতা।
যদিও মার্কিন দূতাবাসের নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন তোড়জোড়ের নজির আগেও দেখেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তার অতি সক্রিয়তায় উৎসাহিত হয়ে নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয় বিএনপি। দেশজুড়ে অবরোধের ডাক দিয়ে শুরু করে জ্বালাও-পোড়াও আগুন সন্ত্রাস। ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া এবং মানুষ হত্যা। তবে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। এরপর মার্কিনিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক উভয়ই জোরদার হয়েছে।
মার্কিনিদের লাগাতার নির্বাচন ইস্যুতে বক্তব্যের পরও এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে সরকার। সংলাপের দিকে অনাগ্রহের কথা স্পষ্টতই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবারও (৪ নভেম্বর) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বললেন, যে যাই বলুক, নির্বাচন হবে সংবিধান মেনেই।
বিগত ২০০৬ সালের শেষ দিকে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস। সেই সময় প্যাট্রেসিয়াসহ পশ্চিমা কিছু কূটনীতিক ছিলেন বেশ সক্রিয়। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য তারা দফায় দফায় খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে তাতে সমাধান আসেনি; বরং ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে প্রচ্ছন্ন সামরিক শাসনের মুখ দেখে বাংলাদেশ।