হোম ফিচার বিশ্ব মুক্ত গনমাধ্যম দিবস পালন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা সৃষ্টি করছে

নিজস্ব প্রতিনিধি :

দেশে অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগ থাকলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজন আইনগত সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। এই দুইয়ের সমন্বয়ে সাহসের সাথে সত্য সংবাদ পরিবেশন করা গেলে সমাজ উপকৃত হয় বলে মন্তব্য করেছেন সাতক্ষীরার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

বিশ্ব মুক্ত গনমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরার ‘সাংবাদিক ঐক্য’ আয়োজিত এক সাংবাদিক সমাবেশে সোমবার এসব কথা বলেন তারা। এসময় তারা আরও বলেন, দেশে এখন বহু সংখ্যক সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন তাদের মত প্রকাশ করতে পারলেও বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইনের ফাঁদে পড়ে বহু সংবাদকর্মী নিগৃহীত হয়েছেন। এ ধরনের আইন পরিহার করে মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে পারলে গনতন্ত্র আরও শানিত হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সুভাষ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী, আরটিভির রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, দেশটিভির শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির আবুল কাশেম, মোহনা টিভির আব্দুল জলিল, বনিকবার্তার গোলাম সরোয়ার, দৈনিক কল্যানের কাজী শওকত হোসেন ময়না, ভোরের কাগজের ড. দিলীপ কুমার দেব, ফারুক রহমান, মুনসুর রহমান প্রমুখ সাংবাদিক।

বক্তারা বলেন, গনমাধ্যমের প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে সাংবাদিকদের মধ্যকার রাজনৈতিক ও অন্যান্য দ্ব›দ্ব পরিহার করে একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। এজন্য রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সকল প্রান্তে থাকা মিডিয়া কর্মীদের সাথে একটি সমন্বয় গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।

দৈনিক কালের চিত্র সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, সাংবাদিকদের পূর্ন স্বাধীনতা থাকতে হবে। আমরা রাষ্ট্র ও দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা বিরোধী সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করি না। বরং মুক্ত গনতন্ত্রের চর্চা চাই।

সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম বলেন, এখনকার সময়ে সরকার কোন নিউজের বিষয়ে সেন্সরশিপ আরোপ করেন না। তবে সম্পাদক ও সাংবাদিকরা নিজেদের দায়িত্বে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করে থাকেন। এর ফলে মুক্ত সাংবাদিকতা বিকাশ লাভ করতে পারে না।

সাবেক সভাপতি এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা পারিপাশি্র্বক নানা যুক্তি দেখিয়ে সাংবাদিকতার গন্ডিকে খাটো করে ফেলছি। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতা হতে হবে গনতন্ত্রের বিকাশে মুক্ত লেখনী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের রাজনৈতিক এবং অন্যান্য গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সাবেক সহসভাপতি ও দৈনিক দক্ষিনের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী বলেন, সত্যের পেছনেও সত্য থাকে। সব সত্য তুলে আনাই সাংবাদিকের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে বর্তমান সময়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য জনগনের পন্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই পন্যের বাজার নিশ্চিত করতে চাই স্বাধীনতা। একইসঙ্গে বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইনও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আরটিভির রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, সব মানুষের কথা এবং তাদের সুখ দুঃখের কাহিনী তুলে ধরার দায়িত্ব সংবাদকর্মীদের। এক্ষেত্রে কোন সাংবাদিক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হলে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটে না।

দেশটিভির শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্ব মুক্ত গনমাধ্যম দিবস পালন করে আসছে। এর তাৎপর্য ধরে রাখতে হলে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাহসের সাথে কাজ করতে হবে।
সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক ওয়ারেশ খান চৌধুরী পল্টু বলেন, গনমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কাঙ্খিত জায়গায় পৌছাতে পারেনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত কালো আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, আমরা সমাজের সকল দূর্নীতি, কালোবাজারি, মাদক, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লিখতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের আইনগত সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

সভার সভাপতি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী বলেন, গনমাধ্যমগুলি এখন রাজশক্তি এবং পূজিশক্তির কবলে আটকা পড়েছে। তাদের নির্দেশিত পথেই সাংবাদিকদের চলতে হয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সুরক্ষা করা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক ও আইনগত সুরক্ষা দেওয়া গেলে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশ সম্ভব। এক্ষেত্রে তিনি সাহসের সঙ্গে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে আরও বলেন, গনমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্জনে দেশের সকল সাংবাদিককে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন