হোম খুলনাসাতক্ষীরা বিচ্ছিন্ন হাত পুনঃসংযোগে নতুন ইতিহাস  : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের যুগান্তকারী সাফল্য

বিচ্ছিন্ন হাত পুনঃসংযোগে নতুন ইতিহাস  : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের যুগান্তকারী সাফল্য

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 40 ভিউজ
স্টাফ রিপোর্টার:
সরিষার মাড়াই মেশিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক যুবকের ডান হাতের কবজি সফলভাবে পুনঃসংযোগ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারের একটি সরিষা তেল কারখানায় কাজ করার সময় হঠাৎ মাড়াই মেশিনে হাত আটকে গিয়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যুবক অভিজিৎ সাধুর ডান হাত। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি ভিত্তিতে জটিল অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীর কুমার দাস ও ডা. বি. কে. মন্ডল-এর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি অভিজ্ঞ মেডিকেল টিম প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ ও জটিল অপারেশন পরিচালনা করেন। আধুনিক মাইক্রোসার্জারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচ্ছিন্ন হাতের স্নায়ু, রক্তনালী, হাড় ও পেশি সফলভাবে পুনঃসংযোগ করা হয়।
চিকিৎসকরা জানান, এটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাসে প্রথম সফল হাত পুনঃসংযোগ (রিপ্লান্টেশন) অপারেশন, যা চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আহত অভিজিৎ সাধু আশাশুনি উপজেলার কুন্দুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা অমল সাধু এবং মা সুমিতা সাধু। অভিজিতের মা সুমিতা সাধু বলেন,“আমার দুই ছেলে—বড় ছেলে অভিজিৎ (১৮) আর ছোট ছেলে প্রসেনজিৎ (১৩)। বড় ছেলে বাবার সরিষার মিলে কাজ করত। সেদিন সকালে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। চিকিৎসকরা এত সুন্দরভাবে অপারেশন করেছেন যে এখন আমার ছেলে অনেকটাই সুস্থ। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।”
আহত অভিজিৎ সাধুও জানান, অপারেশনের পর তিনি বর্তমানে অনেকটা ভালো আছেন এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন।
হাসপাতালের অন্যান্য রোগী আবু ইসা, ইমরান হোসেন ও আব্দুল মোমিনসহ অনেকে জানান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগ বর্তমানে অত্যন্ত উন্নত ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। চিকিৎসকরা রোগীদের প্রতি আন্তরিক ও যত্নশীল।
ডা. বি. কে. মন্ডলের সহকারী ওলিউর রহমান জানান, বর্তমানে এই বিভাগে ৮ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “এখন এখানেই জটিল অপারেশন সম্ভব হচ্ছে। ফলে রোগীদের আর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা খুলনায় ছুটতে হচ্ছে না।”
এই সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রমাণ হলো—সঠিক দক্ষতা, আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকলে জেলা পর্যায়েও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন