রাজনীতি ডেস্ক:
আওয়ামী লীগের সাধারণ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের একমাত্র বাধা সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ বিএনপির নেতৃত্বে ডালপালা বিস্তার করেছে, এই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করব আমরা। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র বাধা সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবৃক্ষ বিএনপির নেতৃত্বে ডালপালা বিস্তার করেছে, এই বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটিত করবো আমরা। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
৭২ বছর পরও রাজনৈতিক শক্তির রসদ জোগায় অমর একুশে। ভোর থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক আখ্যা দেন একুশে ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের বিশ্বাসের বাতিঘর।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল। আমরা প্রথমে ভাষা যোদ্ধা। অতঃপর একাত্তরে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে বাংলাদেশের বিজয় হয়েছে, সেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধি আজকে সারাবিশ্বে বিস্ময়ের।
এদিকে সারাদেশে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ভিড় করছেন মানুষ। একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদিতে ফুল দেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এরপরই নানা শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল নামে রফিক, জব্বার, সালামদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর পরম মমতায় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি।
বাঙালি জাতির জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। এই দিনে মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো ভাষাসৈনিকরা রক্ত ঢেলেছিলেন রাজপথে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের।
দিবসের প্রথম প্রহরেই শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী। পরে মন্ত্রিসভার সদস্য ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। তাদের পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন৷
পরে তিন বাহিনীর প্রধানরা, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই এলাকা ত্যাগ করলে সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহীদ মিনার খুলে দেয়া হয়। এরপর মধ্যরাত থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। কালো ব্যাজ, কালো পতাকা ও ব্যানার নিয়ে পলাশী হয়ে জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে সবাই ধীরপায়ে এগিয়ে চলেছেন শহীদ মিনারের দিকে। কণ্ঠে আছে সেই বেদনাবিধুর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…’।
এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় সবাইকে। রাত পেরিয়ে সকাল হলেও সেই লাইন শেষ হয়নি। এখনও হাজারো মানুষ অপেক্ষায় আছেন ভাষা শহীদদের বেদীতে ফুলেল মাল্য অর্পণের।
এদিকে, পলাশী মোড় থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখী জগন্নাথ হলের গেটের সামনের রাস্তায় মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা প্রত্যেককে তল্লাশির মাধ্যমে শহীদ মিনার এলাকায় প্রবেশ করাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে সারা বিশ্বে।