রাজনীতি ডেস্ক:
সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে মাতম আর মর্সিয়া চলছে মন্তব্য করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের যেন মানবাধিকার থাকতে নেই। সংবিধানে যতটুকু মানবাধিকার আছে সেইটুকু প্রয়োগেরও অধিকার নেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের। হত্যা, লুণ্ঠন ও বন্দি হওয়াই যেন তাদের ভাগ্যের লিখন। বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীদের কান্নার আহাজারিতে এক বিষণ্ন গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে জনসমাজে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিলের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকে বর্বোরচিত আক্রমণ করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। প্রচণ্ড মারধরের পর রক্তাক্ত খোকনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডাররা একই সেনাদলে পরিণত হয়েছে। এদের কাজ শুধু শেখ হাসিনার আক্রোশ বাস্তবায়ন করা।’
তিনি বলেন, ‘দুজন শিশু বর্ষা ও নুরী চিৎকার করে কাঁদছে তার মায়ের মুক্তির জন্য। গোয়েন্দা পুলিশ শিশুদের পিতাকে না পেয়ে তার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। এমনিভাবে ছয় বছরের শিশু সিয়াম বুকফাটা আর্তনাদ করছে তার কারাবন্দি বাবা আবুল কালামের জন্য। পিতা আব্দুল হাইয়ের তিন সন্তানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক ছেলের হয়েছে ১০ বছর সাজা। আরেক ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা এক কঠিন সময় পার করছে। অনেকটা দেশ ছাড়া উদ্বাস্তুর মতো। সহায় সম্বলহীন নিঃস্ব তারা। বিগত ১৫ বছরে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, চাকরি থাকলেও কোনো পদোন্নতি পায়নি, ব্যবসা-বাণিজ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দোকানপাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর ওপর এখন ঘর ছাড়া, বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া নেতাকর্মীরা ধানক্ষেতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য দেশবাসী দেখেছে। সুপারির বাগান, ফলের বাগান এবং রান্নাঘরের লাকড়ি রাখার স্তূপের মধ্যে কোনোরকমে জায়গা করে রাত পার করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাষ্ট্র এখন তার নাগরিকদের জীবন আর সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। রাষ্ট্র বলতেই এখন শুধু শেখ হাসিনা।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনার নীতিই যেন হয় আমাকে সমর্থন করো; না হলে নিশ্চুপ থাকো। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর উগ্র-প্রচারের বিরুদ্ধে টু-শব্দ করতে পারবে না। লুণ্ঠন আর হত্যা যেন কোনো অমানবিক কাজ নয় ক্ষমতাসীনদের কাছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যে সহিংস আক্রমণের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে আসছে সে কারণেই তাদের ধন-সম্পত্তি আর লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়াটা যেন প্রত্যক্ষ পারিতোষিক।’
রিজভী বলেন, ‘আজ সকাল ৬টা থেকে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে যা আগামীকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং আগামীকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দুর্জয় গতিতে জীবনবাজি রেখে এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলো পালন করছে। সরকারের রক্তচক্ষু, চোখ রাঙানি, গ্রেপ্তার অভিযান, নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের মধ্যেও অকুতোভয়ে নেতাকর্মীরা তাদের দূরন্ত মিছিল অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান কর্মসূচি সংলাপহীন সত্যের অবমাননার প্রতিবাদে, সমাজে দুর্বিনীত বর্গীরাই এখন পরম অতিথি- এদের বিরুদ্ধে এবং পদলেহীদের দেশ নিলামের প্রতিবাদে। শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ এবং বিএনপির মহাসচিবসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি সফল করতে সবাই এগিয়ে আসুন।’
সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হামলা-মামলা প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট গ্রেপ্তার ৩৬৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ১৪টি, মোট আসামি ১৫৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ৬৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। এ ছাড়াও গত ১৫ নভেম্বর-২০২৩ নির্বাচনী একতরফা তপশিল ঘোষণার পর মোট গ্রেপ্তার ৫৬৯৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ১৮৯টি, আসামি ২১৯৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, আহত ৭৬৭ জনের অধিক নেতাকর্মী আর মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।