হোম রাজনীতি বিএনপি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায়?

বিএনপি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায়?

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 87 ভিউজ

রাজনীতি ডেস্ক:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ৪৫ বছর পেরিয়ে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে। বয়সের বিচারে প্রবীণ এই দলটি চার দশকে রাজনৈতিক দল হিসেবে যে পরিপক্বতা অর্জন করার কথা, ততটা কি হতে পেরেছে? সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকলেও সরকার পতনের ডাক দিয়ে শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ দলটির শীর্ষ নেতারা যখন বিভিন্ন নাশকতার মামলায় নাজেহাল, ঠিক তখনই কারামুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শীর্ষ দুই নেতার কারামুক্তির পর নতুন প্রশ্ন যোগ হয়েছে: বিএনপি এখন কী পন্থা অবলম্বন করবে বা আবারও কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বিএনপি!

জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দেয় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভোট ঠেকাতে লাগাতার হরতাল-অবরোধ-অসহযোগের মতো কর্মসূচি দেয় বিএনপি। কিন্তু এতসব কর্মসূচির মধ্যেই ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি ছিল বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচন বর্জন করে ভোটগ্রহণ ঠেকানোর ঘোষণা দিলেও কার্যত নির্বাচনের দিন মাঠে ছিলেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে বিএনপির কার্যক্রম। মূলত নেতৃত্ব সংকট, দোদুল্যমানতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে হঠকারিতাই এর অন্যতম কারণ।

নির্বাচন-পরবর্তী কর্মসূচি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২০ দিন পর আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। এর পর ২৭ জানুয়ারি রাজধানীসহ সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করে তারা। আর ডামি সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ফের ৩০ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর, থানা, জেলা, সদর, সব উপজেলা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এভাবে একের পর এক আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে সরব হওয়ার চেষ্টা করে দলটি। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি।

এদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করে সরকার মনে করেছে সারা বাংলাদেশের জমিদার হয়ে গেছে। এ জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই থামবে না। কারণ, ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো যে আন্দোলন করছে, তা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।

ফখরুলসহ শীর্ষ দুই নেতার জামিন

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জামিনে কারামুক্ত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জেল থেকে বেরিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন মির্জা ফখরুল।

ফখরুল বলেন, জনগণ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন। মত ও ভোটের অধিকারের জন্য তারা যে আন্দোলন শুরু করেছে, তাতে জয়ী হবেন। আর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভালো আছি, ভালো থাকতে হবে। দেশের মানুষের ক্ষমতা দখল করে বিগত নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ) পরাজিত হয়েছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী সবারই মনোবল অটুট আছে এবং শক্ত আছে।’

যেভাবে এগোতে চায়

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ক্ষুব্ধ অনেকেই মনে করেন, বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তারা আন্দোলন জোরদার করতে পারছেন না। তাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে অতীতে কোনো সরকারই বিরোধী দলকে জামাই আদরে রাখেনি। জেলজুলুমের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বিরোধী দলকে আন্দোলন করতে হয়।

কিন্তু ৭৬ বছর বয়সী মির্জা ফখরুলেই আস্থা রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, মহাসচিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বিএনপি আবারও সুসংহত হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাবি আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।

অন্যদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আন্দোলন তো এখনও কিছু দেখেননি। নির্বাচনের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে আন্দোলন হয়েছে, ঠিক সেভাবেই এ দেশেও আন্দোলন হবে। আন্দোলন মাত্র শুরু। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটা ভিন্ন রূপ আছে। সেই রূপটা এখনও শুরু হয়নি।

মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কারামুক্তির পর বিএনপি কীভাবে ঘুড়ে দাঁড়াতে চায়–এমন প্রশ্নে জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারামুক্ত হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন। মির্জা ফখরুল আন্দোলন চলমান রাখার যে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির চলমান কর্মসূচি নতুন প্রাণ পেয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় এবং বিএনপির পরীক্ষিত নেতৃত্ব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপি কোনো ধরনের অহিংস আন্দোলনে না জড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে, সামনেও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।

শামসুল আলম সেলিম বলেন, শীর্ষ নেতাদের মুক্তির ফলে বিএনপির ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হতে শুরু করেছে। দলীয় মহাসচিবও নতুন করে চাঙা হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী আন্দোলনের ডাক দেবেন। এভাবে চলতে থাকলে সরকার পদত্যাগ এবং পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন