স্পোর্টস ডেস্ক:
টানা দুই জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তান এখন সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। হারের হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে বাবর আজমের দল। এমনকি যাদের বিপক্ষে কখনো হারের রেকর্ড ছিল না, সেই আফগানিস্তানের কাছেও লজ্জাজনকভাবে হেরেছে পাকিস্তান। এই হারের জন্য ব্যাটিং-বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংকেও দায়ী করছেন সাবেকরা।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) চেন্নাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে ফেবারিট পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু, এই ম্যাচে হারের মধ্য দিয়ে টানা তিন ম্যাচে হারের মুখ দেখল বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানরা। পাঁচ ম্যাচের মাত্র ২টিতে জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে আছে পাকিস্তান। সেমিফাইনালে যাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল তাদের।
আফগানদের বিপক্ষে এই হারের লজ্জা আরও বেড়ে গেছে পাকিস্তানের ভুলে ভরা ফিল্ডিংয়ের জন্য। টুর্নামেন্টজুড়ে ভীষণ বাজে ফিল্ডিং করা পাকিস্তান গতকালের ম্যাচেও করেছে শিশুতোষ সব ভুল। যে কারণে হাসির খোরাক ও হয়েছেন তারা।
১৩০ রানের ওপেনিং জুটিতে পাকিস্তানকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইবরাহিম জাদরান। অথচ এই জুটি আরও আগেই ভাঙতে পারত। ১৬তম ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ওয়াইড লং অনে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। সে বল ঠেকাতে পারেননি শাহিন আফ্রিদি। স্কুলপড়ুয়া বালকের মতো ভুল করে ছেড়ে দেন তিনি। তার এই ভুল দেখে লজ্জা-বিস্ময়ে গ্লাভস দিয়ে মুখ ঢাকেন উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ান। বাজে ফিল্ডিংয়ের দায় এড়াতে পারেন না অধিনায়ক বাবর আজমও। মিস ফিল্ডিংয়ে তিনিও আফগানদের বেশ কিছু রান উপহার দিয়েছেন।
পাকিস্তানের এমন বাজে ফিল্ডিং দেখে মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম। পাকিস্তানের স্পোর্টস চ্যানেল ‘এ স্পোর্টস’ এর বিশ্বকাপের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘দ্য প্যাভিলিয়ন’ এ নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ‘সুলতান অব সুইং’ খ্যাত আকরাম। পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের বাজে ফিটনেসের জন্য একদম ধুয়ে দিয়েছেন তিনি।
আকরাম বলেন, ‘খেলোয়াড়দের ফিল্ডিং ও ফিটনেস দেখুন। আমরা সপ্তাহ তিনেক ধরে বলেই যাচ্ছি, এই খেলোয়াড়রা গত বছর দুইয়ের মধ্যে কোনো ফিটনেস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাননি। আমি নাম ধরে বললে তারা অখুশি হবে। দেখে তো মনে হয়, তারা প্রতিদিন আট কেজি করে খাসির গোশত খায়। তাহলে কি (ফিটনেস) পরীক্ষাটা হওয়া উচিত না?’
পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আকরাম। তিনি বলেন, ‘পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের জন্য খেলার জন্য তারা অর্থ পাচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড থাকতেই হবে। মিসবাহ যখন কোচ ছিল, তখন এটি ছিল। খেলোয়াড়দের পছন্দের সে ছিল না, কিন্তু তাকে দিয়ে কাজটা হয়েছে। ফিল্ডিংটা ফিটনেসের ওপর নির্ভর করে, আর আমরা পিছিয়ে এখানেই। এখন আমরা আগের সেই জায়গায় ফিরে গেছি, যেখান থেকে ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’র জন্য প্রার্থনা করতে হয়।’
পাকিস্তানের হারের পেছনে বোর্ডের ও দায় দেখছেন আকরাম। গতবছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা পাকিস্তান দলের বোর্ড প্রধানের পদ থেকে রমিজ রাজাকে অপসারণের পর দায়িত্ব পান নাজাম শেঠি। এর চারমাস যেতে না যেতেই তাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাকা আশরাফকে।
এ বিষয়ে আকরাম বলেন, ‘গত ৬ থেকে ৮ মাসে আমাদের একজন চেয়ারম্যান (পিসিবি) ছিল। তিনি তিন থেকে চার মাসের জন্য বোরড়ডে এসেই কী করলেন, কোচিং স্টাফ পুরো পাল্টে ফেললেন। অথচ গত বছরই আমরা ফাইনাল খেলেছি। কিন্তু, তিনি এসেই একে সরালেন, ওকে বের করলেন এবং নিজের পছন্দের লোক নিয়ে এলেন। দয়া করে, এরপর যিনিই পিসিবির চেয়ারম্যান হবেন, একটু জাতির কথাও ভাববেন। ওয়াসিম খান ও এহসান মানি অনেক কষ্টে হাই পারফরম্যান্স সেন্টারে একটা কাঠামো দাঁড় করেছিলেন। তারা সেটিকেও পাল্টে জাতীয় কোচিং সেন্টার বানিয়েছে। সেখানে ৮ মাস ধরে কোনো ক্যাম্পই হয়নি। এই পরিবর্তনের প্রয়োজন কী তবে?’