বাণিজ্য ডেস্ক:
দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেশ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে নতুন একটি প্রকল্প উন্মোচন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম ধাপের (ফেইজ-১) উদ্বোধন করা হয়েছে।
পারস্পরিক আঞ্চলিক বাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান একেবারে তলানিতে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ পূর্ব এশিয়া ও সাব-সাহারান অঞ্চলে পারস্পরিক আঞ্চলিক বাণিজ্যের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০ ও ২২ শতাংশ।
যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা হওয়ায় বাংলাদেশের ব্রাজিল কিংবা জার্মানির সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে যে পরিমাণ খরচ হয় তার চেয়ে বেশি খরচ হয় পাশের দেশ ভারতের সঙ্গে। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য আনা-নেয়া করতে ২২ রকমের নথিপত্র দেখাতে হয় এবং ৫৫ জনের স্বাক্ষরের প্রয়োজন পড়ে। বাণিজ্য ব্যবস্থা এত জটিল হওয়ার কারণে প্রতিবেশী দেশ হওয়ার পরও বড় রকমের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে।
এ অঞ্চলের বাণিজ্যের শ্লথগতির জন্য বিশ্বব্যাংক দায়ী করেছে অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে। বিশেষ করে স্থলবন্দর ও আশপাশের এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা এতটাই করুণ যে পণ্যবাহী যানবাহনের গতি ঘণ্টা প্রতি মাত্র ৩০ কিলোমিটার। এর বাইরে এসব অঞ্চলের পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা কাস্টমস বিভাগের সীমাবদ্ধতা ও ডিজিটালাইজেশনের অভাবকেও দায়ী করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে বিশ্বব্যাংক গত বছর জুনের ২৮ তারিখে ‘এক্সিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া’ (এক্সেস) নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করে।
প্রোগ্রামটির আওতায় বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে ৭৫৩ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে। এ ছাড়া নেপাল ও ভূটান পাবে যথাক্রমে ২৭৫ মিলিয়ন ও ১০০ মিলিয়ন ডলার। মূলত দেশগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ও সর্বোপরি বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। প্রোগ্রাম সম্পন্নের সম্ভাব্য সময়কাল ধরা হয়েছে ২০২৯ সালের ৩০ জুন।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক এক্সেস বাংলাদেশের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট গুয়াংজে চেন বলেন, এক্সেস প্রজেক্টের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। মূলত বাণিজ্য সম্প্রসারণকে ডিজিটালাইজেশন, যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে জলবায়ু বান্ধব ও একইসঙ্গে উন্নত এবং নীতিনির্ধারণের জায়গাগুলোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এক্সেস প্রোগ্রাম কাজ করবে বলে জানান তিনি।
ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ এমন একটি সুবিধাজনক জায়গায় আছে যেখান থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সড়ক পথে বাণিজ্য সম্প্রসারণ খুবই সহজ। মূলত এক্সেস প্রোগ্রামটি বাস্তবায়ন হলে ২০২৮ সালের মধ্যে স্থলবন্দর থেকে ৩০ শতাংশ বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। এর বাইরে সময় বাঁচবে ৩০ শতাংশ এবং পণ্য অপচয় কিংবা নষ্ট হওয়ার পরিমাণ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে আসবে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।
এ ছাড়া কাস্টমসের ধরে ধরে অ্যানালগ পদ্ধতিতে পণ্য যাচাই-বাছাই কমে ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে আসবে। কাস্টমস ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। এর বাইরে গ্রিন চ্যানেলের মাধ্যমে পণ্য ছাড় শূন্য থেকে বেরে ৬০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এক্সেস বাস্তবায়নে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
এ ব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ইতোমধ্যে স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বেনাপোল, ভোমরা ও বুড়িমারি স্থলবন্দরের স্থান সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা শুরু হয়েছে।
কাস্টমসের উন্নয়নের ব্যাপারে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কাস্টমসের আওতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে এনবিআর কাজ করছে। এক্সেস প্রোগ্রামটি বাস্তবায়নে কাস্টমস সার্ভিসকে আরও আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে। এতে অ্যানালগ পদ্ধতিতে পণ্য যাচাই কমে আসবে এবং অটোমেশনের মাধ্যমে কাস্টমস ব্যবস্থা হবে বিশ্বমানের।
এক্সেস প্রোগ্রামটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আমদানি-রফতানিকারকরা সরাসরি লাভবান হবেন। অন্যদিকে এর সুফল দেশের সর্বস্তরের নাগরিকরা ভোগ করতে পারবেন বলেন জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।