হোম খেলাধুলা বাজে আম্পায়ারিংয়ের বলি বাংলাদেশ

খেলাধূলা ডেস্ক :

‘বিশ্বকাপের মতো একটা ইভেন্টে যদি এমন ভুল হয় সত্যিই মানা খুবই কষ্টকর। বাংলাদেশের সঙ্গেই কেন বারবার এমন হয়।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের বিতর্কিত আউটটি নিয়ে কথাগুলো বলেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেন। অবশ্য রুবেলেরও মনে পড়া উচিত, তার সঙ্গেও এমন হয়েছে।

বাংলাদেশের স্মরণীয় একটা বিশ্বকাপ ছিল ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেবার বাঘের গর্জন শুনেছিল বিশ্ব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতকে প্রায় নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচে রুবেল হোসেনের একটি ‘নো বল’ ঘিরে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল, সেটি নো বল নয়। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বাংলাদেশ। এবার অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটা বিশ্বকাপ। আবারও বঞ্চনার শিকার সেই বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টজুড়ে নিজেদের সাফল্য-ব্যর্থতা যেমন ছিল, সেই সঙ্গে বারবার বাজে আম্পায়ারিংয়ের নির্মম বলি হতে হয়েছে লাল-সবুজের দলকে।

ইতিহাস বলছে, এবারই বাংলাদেশ সেরা বিশ্বকাপ পার করেছে। প্রথমবারের মতো মূলপর্বে দুটি ম্যাচ জিততে পেরেছে। ২০০৭ সালের সেই প্রথম জয়ের পর আরেকটা জয় পেতে যেখানে বাংলাদেশের অপেক্ষাটা ছিল ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের। টিম ম্যানেজমেন্টের তরফেও বারবার দলের সাফল্যের কথা বলা হচ্ছে। তবে দিনশেষে নেদারল্যান্ডসের নিচে অর্থাৎ পাঁচে থেকে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছে বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভের সবশেষ ম্যাচে যদি ভারতের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে জিতে যায় তাহলে আরও একধাপ নিচে নেমে যাবে সাকিব আল হাসানরা।

শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে হারলেও সেমিফাইনালের লক্ষ্যে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়ে সেটিও হয়নি। বাজে ব্যাটিং-বোলিং কিংবা ফিল্ডিং সব বিভাগেই ধরাশায়ী বাংলাদেশ। তবে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সাকিবের বিতর্কিত আউটের বিষয়টি।

আগের ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ভেজা মাঠে খেলতে বাধ্য করা এবং ফেক ফিল্ডিংসহ আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি বাজে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। ভারত ম্যাচের পর দেশটির প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বাংলাদেশি সমর্থকদের বলেছিলেন, অজুহাত না দিতে। তার মতে, অজুহাত দেখালে বড় হওয়া যায় না।

কিন্তু আজ সাকিবের বিতর্কিত আউটটি নিয়ে তিনি কি বলবেন? বিরাট কোহলির ফেক ফিল্ডিংয়ের ভিডিও সবাই দেখলেও ভোগলে বলেন, তিনি কিংবা কেউই দেখেনি। আজ কি তিনি দেখেছেন? ভারতীয় এ ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার দেখুক বা না দেখুক বিশ্ব ঠিকই দেখেছে। এটা স্বীকার করতেই হবে, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে, খুব বাজেভাবেই হেরেছে। তবে বঞ্চিত বাংলাদেশের প্রসঙ্গটাও এড়ানো যায় না।

রোববার (৬ নভেম্বর) টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত লিটনকে হারালেও শুরুটা খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। অ্যাডিলেডের মাঠে খুব বড় রান হবে না এমনটা বোঝা যাচ্ছিল। এমন মাঠে প্রথম দশ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৭১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে এরপর সৌম্যর আউট হওয়ার পরও তেমন চাপে পড়ার কথা না বাংলাদেশের। কিন্তু শাদাবের পরের বলেই সাকিব যেভাবে আউট হলেন সেটি সবাই দেখেছে। বিতর্কিত আউটটি নিয়ে খোদ সাকিব কেন, বিস্ময় লুকাতে পারেননি ধারাভাষ্যকাররাও। এমনকী ড্রেসিংরুমে অবাক করেছে পাকিস্তানের সাংবাদিকদেরও।

দলের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন কাপ্তান সাকিব আল হাসান। তবে শাদাবের ফুললেংথের বলে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন সাকিব। জোরাল আবেদনের পর বাংলাদেশ অধিনায়ককে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার আড্রিয়ান হোল্ডস্টক। এমন সিদ্ধান্তে হতবাক সাকিব রিভিউ নিয়েছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই।

টিভি রিভিউতেও স্পষ্ট দেখা গেছে, সাকিবের বুটে বল লাগার আগে আল্ট্রা এজে স্পাইক ছিল। অর্থাৎ বল আগে ব্যাটে লেগেছিল। তবে থার্ড আম্পায়ারের নাকি মনে হয়েছে বল ব্যাটে লাগেনি, সরাসরি বুটে লেগেছে। আল্ট্রা এজে যেটা দেখা গেছে সেটা ব্যাট এবং মাটির সংঘর্ষের কারণে। যদিও পরে টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেছে, সাকিবের ব্যাট মাটিতে স্পর্শই করেনি।

ম্যাচশেষে সাকিব বলেছেন, ১৪৫-১৫০ রানের মতো করতে চেয়েছিলাম। এ পিচে সেটি ভালো একটি স্কোর হতো। এই যে, সাকিবের চাওয়া পূর্ণ না হওয়ার পেছনে ব্যাটসম্যানদের যেমন দায় আছে, তেমনি সেই মুহূর্তের সেই ভুল আউটটার কি কম দায়?

ফেসবুকে একজন মন্তব্য করেছেন, বৃষ্টি ও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ায় আইসিসির লস হয়ে গেছে। ভারত ও পাকিস্তানকে ফাইনালে উঠিয়ে সেটি সুদে আসলে শোধ করতে চায় তারা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন