হোম অন্যান্যসারাদেশ বাগেরহাটে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বিষয়ক সভা

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :

বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গ্রামের দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘স্থানীয় সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের অংশগ্রহণে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক দিনব্যাপী সভা বৃহস্পতিবার বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপি এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত‘ বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’এর আওতায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) এবং গণ মাধ্যমের প্রতিনিধিসহ মোট ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আ.ন.ম. ফয়জুল হক, জেলা প্রশাসক, বাগেরহাট, তার বক্তৃতায় বলেন, তৃণমূলের মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রাম আদালত একটি চমৎকার ব্যবস্থা এবং বর্তমান সরকারের একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। গ্রামে অনেক ছোট খাটো ঘটনা ঘটলেও সাধারণ মানুষ তার প্রতিকার চাইতে থানা বা জেলা আদালতে আসেন যাতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু গ্রাম আদালতে টাকা পয়সা ব্যয় হয় না। তাই গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেজন্য আজ আপনারা যারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিচ্ছেন এবং সচেতন করছেন, আপনারা গ্রাম আদালতের সেবা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবেন তাহলেই আজকের সভার উদ্দেশ্য সফল হবে।

খন্দকার রিয়াজুল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, গ্রাম আদালত অত্যন্ত চমৎকার একটি বিচার ব্যবস্থা। গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ন্যায় বিচার পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি আজকে অংশগ্রহণকারী সকল সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে তাদের যার যার জায়গা থেকে গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে তাহলেই গ্রাম আদালত কার্যকর হবে। ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর, মহিতোষ কুমার রায় সভার উদ্দেশ্য এবং বিগত ৪ বছরে বাস্তবায়িত কর্মসূচির অগ্রগতি তুলে ধরেন। গত জুলাই ২০১৭ থেকে জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত সময় কালে প্রকল্প ভ‚ক্ত ৪২টি ইউনিয়নে মোট ৭,৬১৬ টি মামলা দায়ের হয়েছে যার মধ্যে ৭৫০৯ টি মামলা (৯৮.৫৯%) নিস্পত্তি হয়েছে এবং ক্ষতি পূরণ বাবদ ৫,০৯,৮৭,৭৬৮.০০ টাকা আদায় হয়েছে।

গ্রাম আদালতের মাধ্যমে একটি মামলা নিষ্পত্তিতে গড়ে ২৭ দিন করে সময় লাগছে। গ্রামের জনগণ অল্প সময়ে ও অল্প খরচে স্থানীয় ভাবে বিচার পেয়ে অত্যন্ত খুশি। তিনি এই বিচারিক সুবিধার কথা বাগেরহাট জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত গ্রামীণ জনগণ বিশেষত নারীদের মাঝে পৌঁছে দেবার জন্য অংশ গ্রহণকারী সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের তাদের নিজস্ব কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রাম আদালতের বিচারিক সেবা বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণার জন্য আহŸান জানান। সভায় বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ ও অংশগ্রহণকারীবৃন্দ গ্রাম আদালতের সেবাকে আরো গতিশীল করা এবং গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

সভায় সকলের অংশ গ্রহণে কিভাবে গ্রাম আদালতের প্রচারণা বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে দলগত কাজের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়। সভায় রাজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফকিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের একজন উপকারভোগী অংশগ্রহণ করেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন, সহকারী কমিশনার, স্থানীয়স রকার, খাদিজা আক্তার। সভার সভাপতি দেবপ্রসাদ পাল, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার, বাগেরহাট বক্তব্যে বলেন, গ্রাম আদালত প্রচলিত আদালত ও সালিসের মাঝামাঝি একটি মধ্যবর্তী বিচার ব্যবস্থা যা প্রতিটি ইউনিয়নে আছে।

কিন্তু প্রকল্পের সাপোর্ট যে সকল ইউনিয়নে আছে সেখানে গ্রাম আদালত খুব ভালো ভাবে বিচারিক সেবা দিচ্ছে। আর যে সকল ইউনিয়নে প্রকল্পের সাপোর্ট নেই সেখানে আইন ও বিধিমালার আলোকে সেবা দিতে পারছেনা। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩০ দফা নির্দেশনার মধ্যে ১৬ নং নির্দেশনায় গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ এবং এসডিজি’র ১৬ নং গোলে ন্যায় বিচার ও শান্তির কথা বলা হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে গ্রাম আদালতের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। তিনি সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রাম আদালতের তথ্য মানুষের কাছে প্রচারের আহবান জানিয়ে সভাটি সমাপ্ত করেন।

s

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন