খেলার সংলাপ :
লক্ষ্যটা ছিল বেশ কঠিন। জিততে হলে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হতো ৩২৭ রানের পাহাড়সম টার্গেট। গড়তে হতো সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কোনোটাই করতে পারল না বাংলাদেশ। হতাশার বোলিংয়ের পর ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইংল্যান্ডের কাছে হারল বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নিল জস বাটলারের দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ১৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। টানা দুই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করল সফরকারীরা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে মাঠে গড়াবে ৬ মার্চ, চট্টগ্রামে।
আজ শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৩২৬ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে এটিই ইংল্যান্ডের দলীয় সর্বোচ্চ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৩২ রান করেছেন জেসন রয়। ১২৪ বলে তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ১৮ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়।
জবাব দিতে নেমে ১৯৪ রানে থামে বাংলাদেশ। বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশ। দলীয় ৯ রানেই হারিয়ে ফেলে তিন টপ অর্ডার ব্যাটারকে। এর মধ্যে দুজন বিদায় নেন গোল্ডেন ডাকে। একজন লিটন দাস, আরেকজন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনকেই পরপর দুই বলে মাঠ ছাড়া করেন স্যাম কারান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে মুশফিকুর রহিমকেও মাঠ ছাড়া করেন কারান।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর চাপ সামলে কিছুটা প্রতিরোধের আভাস দেন তামিম ও সাকিব। কিন্তু জমে ওঠার আগেই তাদের জুটি ভাঙেন মঈন আলি। বিদায় করেন তামিমকে। ৬৫ বলে ৩৫ রান করে থামেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এরপর হাফসেঞ্চুরি করা সাকিব ৫৮ রানে বিদায় নিলে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯৪ রানেই থেমে যায় তামিম ইকবালের দল।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানী শুরুর আভাস দেয় ইংল্যান্ড। ওপেনিংয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন ফিল সল্ট ও জেসন রয়। সপ্তম ওভারে এসে এই জুটি ভেঙে দেন তাসকিন। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল পয়েন্ট দিয়ে খেলতে যান সল্ট। তবে টাইমিং ঠিক হয়নি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে। ১৫ বলে তিনি করেছেন ৭ রান, দলীয় ২৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে এই একটি উইকেটই নিতে পারে বাংলাদেশ।
জেসন রয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে থিতু হওয়ার আভাস দেন আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক ডেভিড মালান। তবে এই যাত্রায় তাঁকে সফল হতে দেননি মিরাজ। ১৬তম ওভারে মালানকে এলবির ফাঁদে ফেলে মাঠ ছাড়া করেন মিরাজ। ৮৩ রানে ইংল্যান্ড হারায় দ্বিতীয় উইকেট, মালান করেন ১৯ বলে ১১ রান।
মালানের পর দ্রুতই আরেকটি ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। চারে নামা জেমস ভিন্সকে টিকতেই দেননি তাইজুল ইসলাম। তবে তিন উইকেট হারালেও ততক্ষণে থিতু হয়ে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ান রয়। ওপেনিংয়ে নেমে ৫৪বলে তিনি তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। ২২তম ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি পেতে রয় হাঁকান সাতটি বাউন্ডারি।
হাফসেঞ্চুরির পর বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ১০৪ বলে শতকের দেখা পেয়ে যান ইংলিশ ওপেনার। নিজের ১২তম সেঞ্চুরি ১২টি চার ও এক ছক্কায় সাজান রয়। সেঞ্চুরির পর ছুটতে থাকা রয়ের ঝড় শেষ পর্যন্ত থামান সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশি অলরাউন্ডারের এলবির ফাঁদে পড়ে ১৩২ রানে থামেন ইংল্যান্ড ওপেনার।
রয়ের পর উইকেটে জমে যান জস বাটলার। বাকি সময় টেলএন্ডারদের নিয়ে ইংল্যান্ডকে টানেন বাটলার। তাতে নির্ধারিত ওভারে ইংল্যান্ড পায় শক্ত পুঁজি। অধিনায়ক বাটলার ৬৪ বলে উপহার দেন ৭৬ রানের ইনিংস। এ ছাড়া শেষ দিকে মঈন আলি করেন ৪২ রান। স্যাম কারানের ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড : ৫০ ওভারে ৩২৬/৭ (জেসন ১৩২, সল্ট ৭, মালান ১১, ভিন্স ৫, বাটলার ৭৬, জ্যাকস ১, মঈন আলি ৪২, কারান ৩৩; রশিদ ৬ ; সাকিব ১০-০-৬৪-১, তাইজুল ১০-০-৫৮-১, মিরাজ ১০-০-৭৩-১, তাসকিন ১০-০-৬৬-৩, মুস্তাফিজ ১০-০-৬৩-০)।
বাংলাদেশ : ৪৪.৪ ওভারে ১৯৪/১০ (তামিম ৩৫, লিটন ০, শান্ত ০, সাকিব ৫৮, আফিফ ২৩, মুশফিক ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩২, আফিফ ২৩, মিরাজ ৭, তাসকিন ২১, তাইজুল ১, মুস্তাফিজ ০; স্যাম ৬.৪-০-২৯-৪, সাকিব মাহমুদ ৯-০-৪১-০, মার্ক ৪-০-১৪-০, জ্যাকস ৬-০-২৭-০, উড, রশিদ ১০-০-৪৫-৪, মঈন আলি ৯-২-২৭-১)।
ফল : ১৩২ রানে জয়ী ইংল্যান্ড।
সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে নিশ্চিত করল ইংল্যান্ড।