বাণিজ্য ডেস্ক :
বাংলাদেশ সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে শাক-সবজি ও ফলমূল পাঠাতে পারবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এরইমধ্যে দুবাই বন্দরের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালযয়ের সভাকক্ষে কৃষিপণ্য ও আলু রফতানির অগ্রগতি বিষয়ক সভায় একথা জানান তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দুবাই বন্দরের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি শাক-সবজি ফলমূল পাঠানো যাবে। তবে সিঙ্গাপুর না হয়ে সরাসরি পাঠানো গেলে, চার-পাঁচদিনে জাহাজ দুবাই যেতে পারবে বলে জানান মন্ত্রী।
মধ্যপ্রাচ্যে কৃষিপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত আলু রফতানি করে। এসব দেশের পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বন্দরগুলোতে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের জাহাজ সিঙ্গাপুর হয়ে যেতে হয়।
এজন্য স্থানীয় বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারে জোর দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যের মান বজায় রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। তবে করোনা মহামারির কারণে দুই থেকে আড়াই বছর অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য রফতানি করতে হলে মান বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্যামপুরে একটি প্যাকিং হাউস আছে। এটির আধুনিকায়ন কাজ চলছে। এছাড়া পূর্বাচলে আরেকটি প্যাকিং হাউস ও একটি ল্যাবরেটরি করতে সার্বিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দ্রুতই এটি একনেকে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়া কৃষিকে লাভজনক পেশায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের কথা জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষি থেকে লাভ করা, আয় করা আমাদের উদ্দেশ্য।
আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কৃষকরা সবসময় পর্যাপ্ত দাম পান না। সবজি-ডিম ও মাছের উৎপাদন বেশি হলেও কৃষকরা তা বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারকে লক্ষ্য বানাতে হবে। কৃষি থেকে ২০২২-২৩ সালে ২ হাজার মিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত ১.৫ ডলারের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে হচ্ছে।’
এদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনি অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে জাতির কাছে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলব। সত্যিকার অর্থে এখন মানুষ না-খেয়ে থাকে না। অন্তত দুবেলা ভাত খেতে পারেন। আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছি।’
তিনি আরও বলেন, এখন মানুষকে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য দেয়াই মূল লক্ষ্য। অর্থাৎ সার্বিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তার দিকগুলোতে আমরা জোর দেয়ার পাশাপাশি সর্বাত্মকভাবে এটি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালানো হবে।
এছাড়া দেশে খাদ্য নিরাপত্তার চাহিদা অর্জিত হলেও, প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি জানান,কৃষিকে আধুনিকীকরণ, যান্ত্রিকীকরণ ও লাভজনক করতে বাণিজ্যিকীকরণ করা হবে। এ তিনটি বিষয় সামনে রেখে কাজ চলছে বলেও জানান আব্দুর রাজ্জাক।
কৃষিমন্ত্রী আরও জানান, খাদ্য নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় দানাজাতীয় ও অন্য খাবারগুলোর পর্যাপ্ততা বাজারে নিশ্চিত করা হবে। তবে অনেক সময় খাবার থাকলেও কম আয়ের কারণে অনেক মানুষ না খেয়ে থাকেন। এমন হলে কোনো দেশ নিজেকে খাদ্যে নিরাপদ বলে দাবি করতে পারে না। এজন্য মানুষ যাতে মানসম্মত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, যাতে সবাই প্রয়োজনীয় মেধা বিকাশ ও সক্রিয় থাকতে পারেন, সেজন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
এসময় আমেরিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, ‘আমেরিকার মতো দেশেও ক্রিসমাসের সময় বিনামূল্যে খাবার দেয়া হয়। শিকাগোতে ক্রিসমাসের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের পাশাপাশি শ্বেতাঙ্গরাও খাবার গ্রহণ করেন। সেখানে কম দামে খাবার কিনে খেতে স্ট্যাম্প দেয়া হয়। এরমধ্য দিয়ে বোঝা যায়, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার থাকলেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আমেরিকায়ও কমদামে ও ভর্তুকিতে মানুষকে খাবার দিতে হয়। কম আয়ের মানুষ ও বেকারদের জন্য এটা করা হয়।’