হোম অন্যান্যলিড নিউজ বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে,পরিবেশ বিপন্ন ডুমুরিয়ার দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুরুতর

বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে,পরিবেশ বিপন্ন ডুমুরিয়ার দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুরুতর

কর্তৃক
০ মন্তব্য 134 ভিউজ

এম এ এরশাদ, খুলনা অফিস :

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি বিমল কৃষ্ণ সানা। শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম রবি। ওই দুই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নে ১৭/১ পোল্ডারে অবৈধ ভাবে, বন্য নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধ কেঁটে, নোনা পানির চিংড়ি চাষের ফলে পরিবেশ এখন বিপন্ন।

স্থানীয় সূত্র মতে, এ দুই প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৭/১ পোন্ডারে সরকারি জমি দখল, বিশেষ সুভিধায় অবৈধ ভাবে পাউবো’র বেড়ি বাঁধ কেটে একাধিক চিংড়ি চাষীকে উৎসায়িত করে, নোনা পানির চিংড়ি চাষে সহায়তা করা হয় বলে এমন অভিযোগ উঠেছে।

শুধু তাই নয়, অপরিকল্পিত নোনা পানির চিংড়ি চাষের ফলে ভদ্রা নদীর জোয়ারের প্রভাব ও পানির তোড়ে বেড়ি বাঁধের দুই পাশ ঘেষে লক্ষাধিক বনজ বৃক্ষ ইতোমধ্যে শিকড় হীণ হয়ে মারা গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় দশ কিলোমিটার জুঁড়ে বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে এলাকার দরিদ্র মানুষ গুলো কর্মহীণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পোল্ডার এলাকায় জুঁড়ে পরিবেশ এখন হুমকির মুখে।

মাগুরখালী গ্রামের শিক্ষক অশিম কুমার মিস্ত্রী, আ’লীগ নেতা গুরুদাস ভৌমিক ও সাবেক ইউপি সদস্য সুকুমার গোলদার জানান, সংশ্লিষ্ট পোন্ডার এলাকায় সরকারি জমিসহ অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ নোনা পানির চিংড়ি চাষের ফলে, ১৭/১ পোন্ডারে প্রায় দশ কিলোমিটার জুঁড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুই পাশ ঘেষে প্রায় লক্ষাধিক জীবন্ত গাছ মারা গেছে বলে এখন দৃশ্যমান। এলাকা জুঁড়ে উজাড় হচ্ছে সবুজ বনায়ন, বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। কর্মহীন হচ্ছে, গরিব জনগোষ্টি। কোথও কোনে সবজির ক্ষেত চেখে পড়ে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাগুরখালীর দুই শিক্ষক বলেন, ১৭/১ পোন্ডারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানার নিজেই বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে কাঠালিয়া এলাকায় প্রায় দেড় যুগ ধরে প্রায় দুই শ’ বিঘা জমিতে নোনা পানির চিংড়ি চাষ করছেন। তাছাড়া হাতিটানা নদীর ৪৫ বিঘা সরকারি নদী অবৈধ দখলে নিয়ে একই এলাকার কোড়াকাঁটা গ্রামের জনৈক উদয় সানাকে মাছ চাষের জন্য তাকে হারি (ভাড়া) দিয়ে প্রতি বছরে তিন লাখ টাকা আদায় করা হয় বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ।

অপরদিকে মাগুরখালীর পার্শ্ববর্তী শরাফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি, তিনি একই এলাকায় খাগড়াবুনিয়ায় একাধিক স্থানে বেড়ি বাঁধ বিনষ্ট করে নোনা পানির চিংড়ি চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া খাগড়াবুনিয়া গ্রাম সংলঘœ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৫ বিঘা সরকারি জমি দখল নিয়ে তারই আপন ভাগ্নে রাজুর মাধ্যমে মাছ চাষ করা হয়।

নোনা পানির তোড়ে ওই এলাকার পাকা সড়কটি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হচ্ছে। বর্তমান ওই বাঁধের উপর দিয়ে গাড়ী ঘোড়া চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে এ পোল্ডারের হাতটানা, পারমাদাতলা, খাগড়াবুনিয়া, কাঞ্চন নগর, শ্যামগর, কাঠালিয়া, খোরের আবাদ ও বয়লাহারা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বাঁধের প্রায় ৭৫ ভাগ পাউবো’র বেড়ি বাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ওই দুই ইউপি চেয়ারম্যান নেতৃত্বে তাদেরই অনুসারীরা প্রায় শতাধিক চিংড়ি চাষী পাউবো’র সরকারি জমি দখল নিয়ে নোনা পানির চালিয়ে যাচ্ছে।

ফলে এ অঞ্চলের শতশত অতি দরিদ্র পরিবার গুলো সরকারি খাস জমি পাওয়া থেকে বঞ্চিত এবং উম্মুক্ত জলাশয় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না। এলাকার ওই সকল ভূমিহীণ মানুষ যখনই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, তখন তাদের চরম মুল্য দিতে হয়। একই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই এলাকায় ৩০ বিঘা সরকারি খাস জমি দখল নিতে, ওই দুই চেয়ারম্যানের ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী এক ভূমিহীণকে পিটিয়ে হত্যা এবং আরো ২০ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়।

আজও আদালতে ওই হত্যা মামলা চলমান। এছাড়া বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ তুলে স্থানীয় ভূমিহীণদের নামে মিথ্যা মামলা জড়িয়ে তাদের হয়রানী করা হয় বলে সরেজমিন যেয়ে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

মাগুরখালীর বাসিন্দা ডুমুরিয়া উপজেলা যুব লীগের সদস্য প্রভাষক ব্রজেন সরকার জানান, ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নে ১৭/১ পোন্ডারে কাঁঠালিয়া থেকে বয়লাহারা পর্যান্ত প্রায় দশ কিলোমিটার জুঁড়ে বন্য-নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যে কোনো মুহুত্বে ভদ্রা নদীর জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে মাগুরখালী, শোভনা ও আটলিয়া ইউনিয়নসহ ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হবে। হাজার হাজার বাড়ি ঘর, চিংড়ি ঘের, পুকুর, ধান, পাট, সবজির ক্ষেত, ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্টান অসংখ্য সম্পদ বিনষ্ট হবে।

উপজেলা শরাফপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবি বলেন, তার জমি হারি (ভাড়া) দেয়া। রাস্তাঘাট নষ্ট হলে কি, জমির মালিক সংস্কার করবে ? রাস্তা মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আপনি কথা বলেন ! আমিও বলবো। আর সংশ্লিষ্ট পোন্ডারে নোনা পানি চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত এটা সত্য। তবে অন্য কোনো চিংড়ি চাষিদের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আর সম্প্রতি আম্পানে (ঝড়) বেড়ি বাঁধ দুর্বল বলে বেড়ি বাঁধের বনজ সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে।

তারা সরকারি কোনো জমি দখলে সাথে জড়িত নয়। মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃঞ্চ সানার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

খুলনা পাউবো’র (বিভাগ-১) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান মিজান জানান, ওই দুই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন তাদের নোঠিশ পাঠানো হয়েছে কিন্তু কোনো কর্নপাত করেনি। আবারও সরেজমিন দেখে, পাউবো’র জমি দখল, বেড়ি বাঁধ বিনষ্ট এবং বনজ সম্পদ উজাড়ের দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন