হোম অন্যান্যসাহিত্য বইমেলায় পাঠকের উপচেপড়া ভিড়, বিক্রির রেকর্ড ভাঙার হাতছানি

বইমেলায় পাঠকের উপচেপড়া ভিড়, বিক্রির রেকর্ড ভাঙার হাতছানি

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 82 ভিউজ

সাহিত্য ডেস্ক:

দেখতে দেখতে অর্ধেকটা পথ পেরিয়ে গেল বাঙালির প্রাণের বইমেলার। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এই সময়ে পুরো মেলা যেন এখন মধ্যগগনে, জমে উঠেছে পুরোদমে। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী পাঠক ও দর্শনার্থীর পদচারণায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন জমজমাট।

শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনই নয়, কর্মদিবস হিসেবে পরিচিত সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতেও মেলায় মানুষের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি চোখে পড়ছে। বেড়েছে বইয়ের বিক্রিও। পাঠক পেয়ে হাসি ফুটেছে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসা প্রকাশকদের মুখেও। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বইয়ের যোগান দিতে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন স্টলগুলোতে কর্মরত বিক্রয় কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত আগামী প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে ক্যাশবাক্সের সামনে বসে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন সংস্থার হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থাপক মোল্লা মোস্তাফিজুর রহমান। জানালেন এবারের মেলায় তাদের শতাধিক বই প্রকাশিত হচ্ছে। বেশিরভাগ বই এরমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। বাকি বইও আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মেলায় পাওয়া যাবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের এবং সব শ্রেণির পাঠকদের কথা মাথায় রেখেই এবারের মেলায় বই এনেছে তাদের প্রকাশনী। গত মেলা থেকে এ বছর এখন পর্যন্ত বেচাকেনা সন্তোষজনক। ১৫ দিন পর্যন্ত প্যাভিলিয়নে বই বিক্রির যে গতি, তা অব্যাহত থাকলে আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাবে।

এবারের মেলায় বেচাকেনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেন ঐতিহ্য’র প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল। জানালেন, মেলা উপলক্ষে তাদের প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে ২৩০টির মতো বই। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, শিশু সাহিত্য, অনুবাদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণির বই তারা প্রকাশ করেছেন। পাঠকদের সাড়াও বেশ ভালোই পাচ্ছেন। বই বিক্রির পরিমাণও আগের বছর থেকে অনেকটাই বেশি।

২১ ফেব্রুয়ারির আগে পরে এবং মেলার শেষ সপ্তাহে বেচাকেনা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন কাজল।

মূল্যস্ফীতি ও দেশের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বইয়ের বেচাকেনায় পড়ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, যারা বইয়ের প্রকৃত পাঠক, তারা বই কিনবেনই। পাঠকদের মধ্যে বই কেনার প্রবণতা আগের মতোই রয়েছে।

অনন্যা’র প্যাভিলিয়নে কথা হয় বিক্রয় কর্মী মিজানুর রহমানের সঙ্গে। জানালেন গত বছর থেকে এবারের মেলায় পাঠকদের আনাগোনা ও বিক্রির পরিমাণ বেশি। মেলায় তাদের প্রকাশনী ১২০টি নতুন বই প্রকাশ করেছে। বইগুলো ঘিরে পাঠকদের সাড়াও যথেষ্ট। এমন ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর বই বিক্রির পরিমাণ আগের বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।

দেশের আরেকটি পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনী সংস্থা মাওলা ব্রাদার্সের ম্যানেজার শাহীন সিকদার বলেন, এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ আগের বছর থেকে ১৫ শতাংশ বেশি।

ডলার সংকটের প্রভাব বইয়ের দামেও পড়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে বই ছাপতে খরচ আগের থেকে বেশ কিছুটা বেড়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই বইয়ের দাম নির্ধারণ করতে হচ্ছে। আবার পাঠকদের সামর্থ্যের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে বইয়ের দামকে পাঠকদের নাগালে রাখতে প্রকাশনী সংস্থাগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে বইয়ের দাম সামান্য বাড়তি হলেও পাঠকরা তা হাসিমুখে মেনে নিচ্ছেন।

বাংলা একাডেমির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মেলায় বই বিক্রির পরিমাণ তার আগের বছরের থেকেও কম হয়েছিল। ২০২২ সালে যেখানে বই বিক্রি হয়েছিল ৫২ কোটি টাকার, সেখানে ২০২৩ সালে বিক্রি হয় ৪৭ কোটি টাকার। আর করোনার সময় ২০২১ সালে বিক্রি নেমে এসেছিল মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকায়। তবে করোনার ঠিক আগের বছর ২০২০ সালে মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৮২ কোটি টাকার বই।

এ বছর মেলা ঘিরে পাঠক ও দর্শনার্থীদের যে সাড়া, তাতে বই বিক্রি ২০২০ সালকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রকাশনী সংস্থা ও বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্টরা।

মেলা শুরু হওয়ার আগে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা জানিয়েছিলেন, এ বছর মেলায় বিক্রির পরিমাণ আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলতে পারে। বিশেষ করে বইমেলা সংলগ্ন মেট্রোরেল স্টেশন থাকায় এবার মেলায় দর্শনার্থীদের ঢল নামবে। অনেকটা তার পূর্বাভাসকে সফল করতেই এবারের বইমেলায় নেমেছে পাঠক ও দর্শনার্থীর ঢল। ফলে দেদারসে বেচাবিক্রি হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে স্টলের সামনে দাঁড়ালেই।

বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। এবারের মেলায় মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেলায় রয়েছে ৩৭টি প্যাভিলিয়নও।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন