অনলাইন ডেস্ক:
ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীকে ‘দুর্নীতিবাজ’ ও বড় ধরনের মিথ্যাবাদী বলে আখ্যা দিলেন সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে সালথায় এক উঠান বৈঠকে একথা বলেন দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে অনেকেই সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সঙ্গে চলাফেরা করেন নাই। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, আমি চলাফেরা করেছি। তিনি একজন বড় ধরনের মিথ্যাবাদী। আমাদের আপা সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ার এক মাস আগে আমাকে বলেছিলেন আমার মৃত্যুর পর আমাকে গ্রামের বাড়িতে কবর দিস। আপা মারা যাওয়ার পর আমি লাবু চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যদের বলেছিলাম কথাটি কিন্তু কেউই রাখেনি। তারা ঢাকায় আপার কবর দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে লোক মায়ের শেষ কথা রাখেনি সে কোন ধরনের মানুষ আপনারা বলেন। আপাকে এই মাটিতে রাখা হয়নি, তাদেরতো এখানকার মাটি মানুষের প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই। কারণ তাদের বাড়ি চিটাগাং। এই এলাকার প্রতি ভালোবাসা থাকলে আপার কবর এখানে দিতো। যে তার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ না করে প্রতারণা করেছে, তাহলে আপনাদের সঙ্গে প্রতারণা করবে না এটা ভাবেন। ওই দিন থেকেই লাবু চৌধুরীর প্রতি আমার ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। এরকম লোকের সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না। এতদিন সুযোগ পাইনি, এবার দলীয় প্রধান নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করা যাবে, সেকারণে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে নেমেছি।’
দেলোয়ার হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘লাবু চৌধুরী নগরকান্দা-সালথা আওয়ামী লীগের কে, উনিতো কোনো পদেই নেই। আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। নানা কথা তিনি বলতেছেন আমার ও আমার লোকজনের বিরুদ্ধে। ৭ তারিখে ব্যালটের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যাবে।’
লাবু চৌধুরী বাংলাদেশের সেরা দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় লাবু চৌধুরী গ্রেফতার হয়েছেন। দুর্নীতির মামলায় তার ১৮ বছরের কারাদণ্ড হয়। রাষ্ট্রপতি তাকে সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়ায় তিনি বেঁচে যান। এখন তিনি এসেছেন ভোট চাইতে। বিভিন্ন সভায় বলছেন, দেলোয়ার মোনাফেক। আরে তোর চেয়ে বড় মোনাফেক আর কেউ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আপা অসুস্থ থাকায় দীর্ঘ ৫ বছর চালিয়েছেন লাবু চৌধুরী। পরে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আরও দেড় বছর ক্ষমতায় ছিলেন। প্রতি বছর ৭ কোটি টাকা টিআর, কাবিখার বরাদ্দ এসেছে। সব বিক্রি করে সব টাকা তিনি তার পকেটে ঢুকিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাবু চৌধুরী আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে মন্তব্য ও হুমকি দিয়ে বক্তব্য রাখছেন। আপনি যদি এতই জনপ্রিয় হন তাহলে রাতভরে ভোট চান কেন। লাবু চৌধুরীকে কেউ বিশ্বাস করবেন না, সে একটা মিথ্যাবাদী। মিথ্যা ছাড়া তার কাছে কিছু নাই।’
দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাবু চৌধুরী প্রতিটি এলাকায় ভাই ভাইতে ঝামেলা বাধিয়ে মামলা দেওয়াইছে। হত্যা মামলা গুলোর দুই পক্ষকেই সাপোর্ট দিয়েছেন। বাদীকে মামলা করতে বলে, আবার আসামিদের বলে আমি দেখছি, মানুষকে নিষ্পেষিত করে ফেলেছেন। যারা এধরনের কাজ করে তাদের সঙ্গে থাকা যায় না। যারা মিথ্যা কথা বলে তারা কিন্তু বেহেশতে যেতে পারবে না। লাবু চৌধুরী সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী, একারণে আপনারা এলাকার সন্তানকে ভোট দেবেন। যারা অন্য জায়গা থেকে এসেছে তারা একদিন থাকবে না এখানে, তাই যে থাকবে তাকে নির্বাচিত করুন।’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল মিয়ার কোনো কর্মীর ওপর হামলা হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। জামাল মিয়ার রাজনৈতিক গ্রাউন্ড আছে, আপনার কী আছে। শুধু আপার কথা বলেই আপনি পার পেয়ে যেতে চান। কিন্তু আর হবে না, জনগণ বুঝে গেছে। ৭ তারিখের ভোটে জনগণ তার প্রমাণ দিয়ে দেবে।’
এর আগে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া বাজারের পাশে একটি বাড়িতে নির্বাচনী সভায় সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে ‘মীরজাফর’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের পরদিন জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর কথা বলেন ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী।
নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহদাব আকবর ছাড়াও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। অন্য দুই প্রার্থী হলেন খেলাফত আন্দোলনের জয়নাল আবেদীন বকুল মিয়া এবং জাকের পার্টির ফজলুর হক।