ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি সহ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। ফলে আগত রোগীরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এই দৃশ্যটি সরকারি এই হাসপাতালে ছুটির দিন ব্যতিত নিত্যদিনের দৃশ্য। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে এর প্রতিকারের পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসকের নিকট থেকে ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে বাইরে বের হলেই সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরেন ৫-৬ জন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিরিা। এসব প্রতিনিধিরা ব্যবস্থাপত্র দেখে কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে ছেড়ে দেয়। এরপর ওই সব অসহায় রোগীদের ঘিরে ধরেন বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা। হাসপাতাল চত্ত¡রে কেউ দাড়িয়ে থাকেন রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে কোন কোম্পানি ওষুধ লেখা হয়েছে। আবার কেউ দাড়িয়ে থাকেন রোগীর কি কি পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। এসব রোগীদের তাদের স্ব স্ব ক্লিনিক ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। এক কথায় অসুস্থ রোগী ও রোগীর পরিবার এদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তাদের উৎপাত। বার বার বলা সত্তে¡ও তারা হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। আর রোগী ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বার থেকে বের হলেই ঘিরে ধরেন। চিকিৎসকের কক্ষের দরজায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির দেখা করার নিষেধ থাকলেও যে কারনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এমন দৌরাত্ম্য দেখে মনে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে অনেকটাই জিম্মি।
অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসকের কক্ষের দরজার সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখা করার নিষেধ থাকলেও কোম্পানির প্রতিনিধিদের কেউই তা মানছেন না।
এমনকি দেখা গেছে, চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে মহিলা রোগীদের সঙ্গে ঠাসাঠাসি করে বিব্রত করছেন এবং ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে তারা ভিজিট করে রোগীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি জানান, ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লেখার জন্য বিভিন্ন সময়ে উপহার দিতে হয় চিকিৎসকদের। তার বিনিময়ে রোগীকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেন তারা। এছাড়াও এসব ব্যবস্থাপত্রের একটি কপি মেইল করে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাতে হয়।
কয়েকজন রোগীরা জানান, তারা হাসপাতালে আসছেন সরকারি চিকিৎসা ও ওষুধ নিতে। বাইরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা যেভাবে ছবি তোলে, মনে হয় বাইরে থেকে কেনা ছাড়া ওষুধ দেবে না। আমরা যদি বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনি তাহলে সরকারি হাসপাতালে এসে কী লাভ।’
এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহ্ মো. মহিবুল্লাহ বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির লোকজন চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিজিট করা নিষেধ। তাদের সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা ও দুপুর ১টার থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসকের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিদেরও হাসপাতালে আসা নিষেধ। তিনি বলেন, সোমবার সকালে ফকিরহাটের সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষদের ডেকে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি তারা রোগীদের হয়রানি করে তবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানান।
