জাতীয় ডেস্ক:
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর করার লক্ষ্যে ভুটানকে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মোটরযান চুক্তি (বিবিআইএন এমভিএ) কাঠামোতে পুনরায় যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ৯ম বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের সভা ২৪-২৫ এপ্রিল ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সভায় ভুটানের শিল্প বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সচিব তাশি ওয়াংমোকে এ আহ্বান জানান বাণিজ্যসচিব।
বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। উভয়পক্ষ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা প্রশমন এবং রফতানি সুবিধা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ, ট্রানজিট এবং যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, পর্যটন, কাস্টমস ও ল্যান্ডপোর্টের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে সম্মত হয়।
বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের ৯ম সভায় বাংলাদেশ-ভুটান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনা করা হয়। উভয় সচিব অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সম্পাদনের ফলে দুইদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং উভয়পক্ষই বিদ্যমান বাংলাদেশ-ভুটান অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত পণ্য অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভুটান ট্রাফিক ইন ট্রানজিট চুক্তি এবং এর প্রটোকল বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষামূলক রফতানি ও আমদানি (ট্রায়াল রান) পরিচালনার জন্য সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভুটানের কাস্টমস সম্পর্কিত তথ্য ও প্রতিবেদন আদান প্রদান এবং উভয় দেশের শুল্ক কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি জন্যে উভয় পক্ষই স্বল্পতম সময়ের মধ্যে কাস্টমস মিউচুয়াল অ্যাসিসটেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট (সিএমএএ) স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে। উভয় সচিব গত মাসে ভুটানের মহামান্য রাজার বাংলাদেশ সফরের সময় গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেন এবং সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভুটান প্রতিনিধি দলের প্রধান মিসেস তাশি ওয়াংমো বলেন, ভুটান বরাবরই নিবিড়ভাবে বাংলাদেশের শিল্প-বাণিজ্যের সমৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অনুসরণ করে। করোনা মহামারি, ধীর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশে স্থিতিশীল এবং টেকসই উন্নয়ন দৃশ্যমান গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ হিসেবে ভুটান সবসময় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক শান্তি ও অগ্রগতির প্রয়োজনে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছে।
বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের সভার পাশাপাশি তপন কান্তি ঘোষ ভুটানের শিল্প বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নামগেল দর্জি এবং পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্যে সংক্রান্ত মন্ত্রী ডি এন ধুঙ্গেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাৎকালে উভয় মন্ত্রীই গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ভুটানের শিল্প বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্যে সংক্রান্ত মন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, ট্যুরিজম এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণে সম্মত হয়েছেন। ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুটানের বিবিআইএন-এমভিতে পূর্ণ সদস্য হিসেবে পুনঃ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনাধীন এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।