জাতীয় ডেস্ক:
এক দিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পাঁচ বছর পর দেশের ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ ভোটার মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন পরবর্তী সরকার। প্রচারণা শেষ হওয়ায় প্রার্থীরা এখন সময় কাটাচ্ছেন পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করা থেকে কর্মীদের ভোটের দিনের আগে ও পরের দায়িত্ব ভাগ করে দিতে।
১৮ দিনের প্রচারযুদ্ধ শেষ হয়েছে আজ সকাল ৮টায়। এখন ব্যালটযুদ্ধের অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় সারা দেশ। কারা পাচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব? জনরায়ে সংসদে মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে কে?–দেশের প্রতিটি অলিগলি, চায়ের কাপেও চলছে সেই সমীকরণ কিংবা আলোচনা। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে দেখা মেলেনি গত কয়েক দিনের সেই চিত্র। প্রার্থীদের প্রচারণা ক্যাম্পগুলো নীরব। দলীয় কর্মী-সমর্থকরা সড়কে নেই। কোথাও মিছিল-মিটিং নেই। মাইকিংও দেখা মিলছে না। যেন ভোটের উৎসবের আগে প্রার্থীদের নীরবতা। ব্যালট রায়ে কে কতটা এগিয়ে থাকবেন, সে অঙ্ক কষছেন আলোচিত, তারকাসহ সব প্রার্থীই।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচার শুরু হয়েছিল। প্রচারযুদ্ধে সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা ও প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা, শোবিজ তারকা, সংগীতশিল্পী এমনকি হিরো আলমের মতো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল তারকাও রয়েছেন মাঠে। আলোচিত-সমালোচিত ব্যারিস্টার সুমনের তির্যক মন্তব্য আর ফরিদপুরে নিক্সনের ঝাঁজালো বক্তব্যও দেখেছে দেশের মানুষ। দিনরাত এক করে ভোটারের মন জয়ে দুয়ারে দুয়ারে ছুটেছেন প্রার্থীরা। অতীতের ভুলের জন্য প্রচার-প্রচারণায় ক্ষমা চেয়েছেন অনেকে। অঝোরে কেঁদে, চোখের জল ফেলেও মানুষের মন পাওয়ারও চেষ্টা করেছেন কিছু প্রার্থী। আবার একে অপরের বিষোদ্গারে আলোচনায় কেন্দ্রে এসেছেন কেউ কেউ।
কড়াকড়ির মধ্যেই আচরণবিধি ভাঙার অহরহ ঘটনার সঙ্গে কোনো কোনো আসনে প্রার্থিতা বাতিল। যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়ে উচ্চ আদালত থেকে ভোটের মাঠে ফিরেছেন অনেকে। দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্রের তুমুল বাগ্যুদ্ধের পাশাপাশি সংঘর্ষও হয়েছে কিছু এলাকায়।
ভোট বর্জন করে বিএনপির হরতাল-অবরোধের মধ্যেই শতাধিকের বেশি আসনে স্বতন্ত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনেক স্থানে নির্বাচনে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এরপরও অধিকাংশ এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচার চললেও অন্তত অর্ধশত আসনে হামলা, মারামারি, গোলযোগ ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনা ভোটের আলোচনাকে সরব রেখেছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; বড় ধরনের গোলযোগের শঙ্কা নেই। প্রচারের সেই পর্ব পেরিয়ে এখন ভোটের অপেক্ষা।
তবে এখন সব পক্ষের মনোযোগ কেন্দ্রে ভোটার আনা আর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দেশজুড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখার কাজে নেমে গেছেন। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতির কার্যক্রম শেষ করেছে। রোববার ভোটের আগে প্রচার শেষে এখন ভোটের বাকি প্রস্তুতি নিতে দুদিন সময় পাচ্ছেন ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী। পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করা থেকে কর্মীদের ভোটের দিনের আগে ও পরের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে ব্যালটে জনগণের রায় কী হবে–সেই প্রতীক্ষায় সময় কাটবে তাদের। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আরেক পক্ষের নজর থাকছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণেও।
এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে ২৯৯ আসনে। বিএনপিবিহীন এ ভোটে থাকছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮ দল, যাদের প্রার্থী রয়েছে ১ হাজার ৫৩৪ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন, যাদের অন্তত তিন ভাগের এক ভাগই আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পদাধিকারী। মোট নারী প্রার্থী রয়েছেন ৯৩ জন, আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রার্থী ৭৯ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ। এর মধ্যে নতুন ভোটার ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৭৬ লাখ ও নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ। আর ট্রান্সজেন্ডার ভোটার ৮৪৯ জন।