আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইউক্রেন সংঘাত পরমাণু যুদ্ধে গড়াতে পারে౼এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, পরমাণু সংঘাতের কথা ‘অচিন্তনীয়’। খবর আরটির।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান লড়াইয়ের মধ্যে পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ‘হুমকি’ দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ ‘কোনো প্রস্তুতি’ নিচ্ছে কি না౼সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন দুজারিক বলেন, ’এ ব্যাপারে আপনাকে বলার মতো কোনো তথ্যই আমার কাছে নেই। তবে পরমাণু সংঘাতের সামান্যতম সম্ভাবনাও ভাবনার বাইরে।’
জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ’বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো ধরনের রাসায়নিক বা জৈব অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি সামনে আনেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, রাশিয়া তার দেশের বিরুদ্ধে কৌশলতগতভাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। তবে নিজের এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে পরমাণু হামলার জোর সম্ভাবনা রয়েছে দাবি করে এর জন্য বিশ্বকে দ্রুত প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান জেলেনস্কি। শুক্রবার সিএনএনকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, বিশ্বের সবারই, সব দেশেরই এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’
পরমাণু হামলা থেকে বাঁচতে প্রস্তুতির আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা বসে থাকতে পারি না। বিশ্বকে অবশ্যই সম্ভাব্য পরমাণু হামলার বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।’ ঠিক কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘তেজস্ক্রিয়তারোধী ওষুধের জোগান ও বিমান হামলারোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরমাণু হামলা রুখতে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া দরকার।’
জেলেনস্কির এমন দাবি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উড়িয়ে দেন রুশ কর্মকর্তারা। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বেশ জোর দিয়েই কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে পরমাণুর ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করেছেন। মঙ্গলবার ইন্ডিয়া টুডেকে এক সাক্ষাৎকারে ল্যাভরভ বলেন, ‘আমি এমন একটা কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না, যা নিয়ে অতি নালায়েক একজন কথা বলেছেন।’
স্পষ্টত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ইঙ্গিত করে রাশিয়ার এ শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, ‘শুধু একজন ব্যক্তিই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে কথা বলছেন। মস্কো তার সামরিক অভিযানকালে কৌশল হিসেবে কখনোই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেনি।’
পরমাণু যুদ্ধ এই মুহূর্তে সারা বিশ্ব চরম উদ্বেগে। বেশির ভাগ দেশের হাতেই মজুত শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্র। আর এটাই সমগ্র মানবজাতির কাছে চরম হুমকি। এসব দেশ মারণস্ত্র ব্যবহারের সপক্ষে যুক্তিও সাজিয়েছে। তাদের বক্তব্য, শত্রুর হাত থেকে দেশের শান্তি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্যই পরমাণু অস্ত্র হাতে রাখা হয়েছে।
তবে সম্প্রতি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে এক ঐতিহাসিক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাঁচ দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া ও ফ্রান্স। গত বছর স্বাক্ষরিত বিরল ওই বিবৃতিতে দেশগুলো বলেছে, যা-ই ঘটে যাক, পরমাণু যুদ্ধ নয়। কারণ, পরমাণু যুদ্ধে কোনো দেশের পক্ষেই জয়লাভ সম্ভব নয়। বরং তা পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।