জাতীয় ডেস্ক:
সরকারি কোষাগারের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নয়ছয়ের শাস্তি শুধু নিম্নপদে পদায়ন! এমনটাই ঘটেছে পদ্মাসেতু প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের নামে। যিনি এই কাজ করেছেন তাকে পদাবনতি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারের খাস জমিকে বেআইনিভাবে অধিগ্রহণ দেখিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মাদারীপুরের তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটকের বিরুদ্ধে। ৪ এপ্রিল তাকে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে পদাবনতি দিয়ে সহকারী সচিব করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের একটি কপি এসেছে সময় সংবাদের হাতে।
প্রমথ রঞ্জন ঘটক বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৩ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে উপপ্রধান (হাইড্রোলজিস্ট) হিসেবে কর্মরত। শাস্তির কারণে ষষ্ঠ গ্রেডে থাকা এ কর্মকর্তা আগামী তিন বছরের জন্য নবম গ্রেডের বেতন-ভাতা পাবেন।
জানা যায়, মাদারীপুরের মাগুরখণ্ড এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রমথ ২০২১ সালের জুনে পাঁচ ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দেখা গেছে, সেই জমি কখনোই ওই পাঁচজনের ছিল না। বরং জমিটি ছিল সরকারি, যার জন্য কাউকেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুযোগ নেই।
ক্ষতিপূরণের টাকা না দেয়া জেলা প্রশাসক প্রমথকে মৌখিক নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। তবুও প্রমথ রঞ্জন ঘটক ডিসির নির্দেশ উপেক্ষা করে ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন। শুধু তাই নয়, ইস্যুকৃত চেকগুলোর ক্ষমতাপত্র সম্পাদন ২০২১ সালের ১১ জুলাই হলেও তিনি পেছনের তারিখ অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩০ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অবমুক্তির তারিখ উল্লেখ করে চেকে স্বাক্ষর করেন। অর্থাৎ মাদারীপুর জেলায় তার শেষ কর্মদিবসের তারিখ উল্লেখ করে চেক স্বাক্ষর করেন তিনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বর্তমান উপপ্রধান প্রমথ রঞ্জন ঘটক মাদারীপুরে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা থাকাকালে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ০৬/২০১৭-২০১৮ নম্বর এলএ কেসে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমির বিপরীতে পাঁচজনের নামে পাঁচটি চেক ইস্যু করেন। চেক গ্রহীতা মতি শেখকে ১ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৮৯১ টাকা, মো. রাজ্জাক মোল্লাকে ১ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৮৯১, আ. হাকিম শেখকে ১ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৮৯১, রমিজউদ্দিন হাওলাদারকে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫৩ হাজার ১০৪ টাকা এবং মো. সাওনকে ৩৬ লাখ ২ হাজার ৯৬৮ টাকার চেক দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে প্রমথ রঞ্জন ঘটকের অপরাধ প্রমাণিত হয়। চেক স্বাক্ষরের বিষয়টি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলেও তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তাকে অসদাচরণ এবং দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৪(৩) (ক) বিধি মোতাবেক তিন বছরের জন্য নিম্ন পদে অবনমিতকরণ অর্থাৎ সিনিয়র সহকারী কমিশনার বা সিনিয়র সহকারী সচিবের নিম্নপদ সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিব পদে বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা মূল বেতনে অবনমিতকরণ শীর্ষক দণ্ড দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে শাস্তির মেয়াদ শেষে তিনি আগের পদে ফিরবেন!
এসব বিষয়ে জানতে গত সাত দিনে কয়েক দফা ফোন করেও প্রথমকে পাওয়া যায়নি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে তিনি জানান, ঢাকার বাইরে রয়েছেন। ফেরার পর যখন অবসর সময় পাবেন তখন সময় সংবাদকে জানাবেন।