যশোর অফিস :
কবি নিমাই ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘যে ভালোবাসা পেয়েছে, সে আর কিছু পায়নি, আর যে সব কিছু পেয়েছে সে ভালোবাসা পায়নি’। ভালোবাসা পাওয়া যত কষ্টের তা রক্ষা করাও কষ্টের। হাত পাতলেই ভালোবাসা পাওয়া যায় না, অর্জন করতে হয়। যশোরের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করে বিদায় নেওয়া যে কষ্টের তা দেখা গেছে। আর বেসকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সাধারণ মানুষের যে ভালোবাসা পাওয়া যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক গাজী মো. এনামুল কবীর। তিনি যশোরাঞ্চলের মানুষের মনের মণি কৌঠায় ধাকবেন বহুদিন। বিদায় বেলায় সহকর্মীসহ চাকরিকালীন সময়ে যে সব বন্ধু হয়েছিল তারা তাকে বহুদিন মনে রাখবেন। আজ শনিবার তিনি যশোর থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকা চলে যাবেন। তার এ সময়ে বিদায়টা কেউ মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না তার সর্তীর্থরা। সকলেই অশ্রুসিক্ত বিদায় নিয়ে যশোর ছাড়ছেন তিনি।
গাজী মো. এনামুল কবীর ২০১৬ সালে পদক্ষেপ মানববিক উন্নয়ন কেন্দ্রের যশোর জোনের জোনাল ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে তা কাটিয়ে ওঠেন। এরপর ভালো লাগতে শুরু করে যশোরা লের মানুষদের। সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেন নিজেকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে মানুষের কল্যাণে যা যা করা যায় তা তিনি করে দেখিয়েছেন। সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তার ক্ষমতার মধ্যে যা কিছু করে দেওয়া সম্ভব তা তিনি দিয়েছেন। গরীব, অসহায় শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন শিক্ষা বৃত্তি। করোনার সময় মানুষ যখন ঘর বন্দি ঠিক সেই সময়ে তিনি মানুষের কাছে ছুটে গেছেন। করোনার দুই বছরে বহু মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন। রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেছেন নিজে দাড়িয়ে। খাবার নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়েছেন। যে সব মানুষ বাজারে গিয়ে বাজার করতে পারেনি তাদের বাজার করে বাড়ি পৌছে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌছে যেতেন এই বেসরকারি কর্মকর্তা। তার মতো আরো যেন মানুষ সাধারণ মানুষের প্রতি এগিয়ে আসেন তার জন্য মানববতার বাজার দিয়েছেন। যে বাজার থেকে সাধারণ মানুষ তার প্রয়োজন মত দ্রব্য বিনামূল্যে নিতে পারে তার ব্যবস্থা করেছেন। ঈদের সময় সাধারণ মানুষকে ঈদ উপহার দিয়েছেন। একটি পরিবারে ঈদের সময় যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য জনকল্যাণ মূলক কাজ করে গেছেন। দীর্ঘ ছয় বছর তিনি নিজ কর্মগুণে আলো ছড়িয়েছেন যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও খুলনা জেলার মানুষের মধ্যে।
গাজী এনামুল কবীর একজন সৃষ্টিশীল মানবিক ও প্রগতিশীল মানুষ আখ্যা দিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
পদক্ষেপ মানবিক উন্নায়ন কেন্দ্রের যশোর জোনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম মনে করেন, সহকারী পরিচালক গাজী এনামুল কবীর তার কর্মের মূল্যায়ন হিসেবেই সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সবার কাছেই তিনি প্রিয় মানুষ হতে পেরেছেন। এ অ লের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন।
অফিস সহকারী আব্দুস শহীদ বলেন, স্যার যে ভালোবাসা দিয়েছে তার আর হয়ত’ কোন দিন পাবো না। স্যারের ব্যবহার সারা জীবন মনে রাখবো। আমরা কখনো স্যারকে ভুলতে পারবো না।
সকলের ভালবাসার অনুভুতি ব্যক্ত করে গাজী এনামুল কবীর বলেন, ‘আমার যত প্রশংসা সবকিছুই সহযোদ্ধা-সহকর্মী ও কর্মকর্তাদের জন্য। সকলেই আমাকে এমনভাবে সহায়তা করেছে, তারা এমনভাবে দায়িত্বগুলো পালন করেছে যার ফলশ্রুতিতেই আমি আজ সম্মানিত বোধ করছি। কতটুকু সার্থক হয়েছি সে আপনাদের বিচার্য। যশোরে যোগদানের পর থেকে পথ চলায় কি দিয়েছি, কি পেয়েছি, সে হিসেব করার দুঃসাহস আমার নেই। শুধু এটুকুই বলবো, আমি ভালোবাসা কুড়াতে এসেছি এবং বুক ভরে ভালোবাসা নিয়ে যাচ্ছি। দায়িত্ব পালনকালে সহকমীসহ এ অঞ্চলের মানুষের ঐকান্তিক সহযোগিতা পেয়েছি। বিদায়বেলা আমার চলার পথে কাউকে আমার অনিচ্ছাসত্তেও কোনো কষ্ট দিয়ে থাকলে নিজগুণে ক্ষমা করে দিবেন। দেখা হবে কোন এক পথে-প্রান্তরে। তখনও যেনো বলতে পারি, আমি আপনাদেরই একজন। যেন সালাম বিনিয়ম করতে পারি। আপনাদের সকলের জন্য রইল দোয়া ও শুভ কামনা।