হোম অন্যান্যসারাদেশ নড়াইলে চাহিদার থেকে দশ হাজার বেশি পশু মোটাতাজা করেছে স্থানীয় খামারী, হাটে গরু আছে ক্রেতা নেই- দু:চিন্তায় ৪ হাজার খামারি

নড়াইলে চাহিদার থেকে দশ হাজার বেশি পশু মোটাতাজা করেছে স্থানীয় খামারী, হাটে গরু আছে ক্রেতা নেই- দু:চিন্তায় ৪ হাজার খামারি

কর্তৃক
০ মন্তব্য 144 ভিউজ

নড়াইল অফিস :
নড়াইলে কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই দেশিয় পদ্ধতিতে জেলার চাষিরা গবাদি পশু মোটাতাজা করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাই বিক্রি করে। গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার গরু ও ছাগল বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেছে জেলার চাষিরা। গত বছর ভারত থেকে নড়াইলে কোরবানীর হাটে পশু কম আমদানী করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা লাভও করেছিল ভাল। তাই এই বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে লাভের আশায় জেলাতে কোরবানীর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন খামারিরা। সপ্তাহ খানেক পূর্বে থেকে জেলার বিভিন্ন হাটে পর্যাপ্ত পরিমান পশু বিক্রয়ের জন্য তোলা হলেও আশানোরুপ ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হচ্ছেনা এ সকল গুরু ও ছাগল। চলতি বছরে করোনার কারনে কোরবানির চাহিদা অনেক কম থাকায় বেচাকেনা কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা। এতে দ:চিন্তায় পড়েছে জেলার চার হাজার একশ আঠারো জন খামারীরা।
জেলা প্রানি সম্পদ অফিস সুত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নড়াইলের কৃষকেরা ও খামারীরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে। গত বছর সাড়ে আটাশ হাজার গরু ও ছাগল মোটাতাজা করছে জেলার খামারি ও কৃষকেরা। চলতি বছরে ২৯ হাজার ৫শ ৩২টি পশু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। যার মধ্যে ১৮ হাজার ৮শ একটি দেশি গরু, ১০ হাজার ৭শ ৩১টি ছাগল। এ বছরও তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর জেলায় ১ হাজারের বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। নড়াইল জেলা প্রানি সম্পদ সুত্রে জানাগেছে, করোনার কারনে চলতি বছর জেলাই কোরবানির চাহিদা বেশ কম। এ বছর কোরবানি ঈদে জেলাই কোরবানির চাহিদা রয়েছে সব মিলিয়ে সর্বচ্চো ১৮ হাজার। জেলার খামারিরা যে পরিমান পশু মোটাতাজা করেছে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত দশ হাজার গরু বিভিন্ন জেলাই যোগান দিতে পারবে।
স্থানীয় খামারিরা জানান, গত বছর ভারত গরু আমদানি কম করায় স্থানীয় গরুর চাহিদা ছিল বেশি। তাই জেলার গরু খামারীরা ভাল লাভ করেছে। চলতি বছর জেলার অনেক খামারি গত বারের তুলনায় আরও বেশি গরু মোটাতাজা করছে। অনেক নতুন খামার গড়ে উঠছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারন কৃষকেরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি দুটি করে গরু মোটাতাজা করছে।
খামারি ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, জেলায় মোট যে পশু মোটাতাজা করা হয় তার ৫৫ ভাগ মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৪৫ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে জেলার সাধারন কৃষকেরা। প্রতিটা কৃষকের গোয়াল ঘরে তাদের হালের গরুর পাশাপাশি একটি দুটি করে মোটাতাজা করন গরু রয়েছে। আর এসকল গরু কোরবানিকে সামনে রেখে মোটাতাজা করছে তারা।
খামারি পারভেজ মোল্যা জানান, ৫ মাস পূর্বে তিন ৭টি গরু ক্রয় করে মোটাতাজা করেছে। সেই সময় যে দামে গরুগুলো কিনেছিলেন এখন সেই দামও হচ্ছেনা। অথচ তিনি এ ৭টি গরুর পেছনে গত ৫ মাসে আরও দেড় লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। মরিচপাশা গ্রামের কৃষক লাবলু বলেন, ৭ মাস পূর্বে তিনি ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনে লালন পালন করেন। এখন হাটে নিলে ৭০ হাজারের বেশি দাম হচ্ছেনা। এই গরুর পেছনে তিনি সব মিলিয়ে প্রায় ৯৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। বড়দিয়া এলাকার এক খামারী জানান, ৪/৫ মাস পূর্বে তিনি দুটি গরু কিনে মোটাতাজা করেছেন। এই গরু দুটির পেছনে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা, বর্তমানে দুটি গরুর দাম হচ্ছে সর্বচ্চো এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাটে যেয়ে দেখা গেছে, প্রতিটা হাটেই অসংখ্য কোরবানির পশুর আমদানী। ক্রেতারা শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছে। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। হাতে গোনা দু একটি গরু বিক্রি হলেও দাম কম। অনেক খামারি লচে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। আবার অনেকে গরু বিক্রি না করে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
হাটের কয়েকজন ইজারাদার জানান, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে নড়াইলে আসে। করোনার কারনে অন্য কোন জেলা থেকে ব্যাবসায়ীরা আসছেনা। ফলে বাইরের জেলা থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা না আসায় হাটে বেচাকেনা জমে উঠছেনা।
নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এসকল হাটে বিক্রয় করেন। ১১টি হাটের মধ্যে জেলায় মোট ৪টি বড় হাট রয়েছে, মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া গরুরহাট, শিয়েরবর গরুরহাট, এবং পুরুলিয়া গরুরহাট। বর্তমানে এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা)।
নড়াইল জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মারুফ হাসান জানান, বছর দশেক পূর্বে নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করত। সে সময় সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকেরা গরুর নায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৩-৪ বছর সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় খামারি ও কৃষকেরা লাভবান হয়েছে বেশ। তাই এবছরও অনেক কৃষক গরু মোটাতাজা করেছে। করোনার কারনে খামারিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। করোনা সংকটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ‘নড়াইল কোরবানির হাট’ নামে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেরও উদ্বোধন করা হয়েছে । আশা করছি জেলার খামারি, কৃষকে এবং ক্রেতা এই হাটের কারনে উপকৃত হবে।
জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, করোনার দুর্যোগময় মুহূর্তে কোরবানির পশু ঘরে থেকেই মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেনার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ যাতে প্রতারিত না হন, সেদিকেও কঠোর নজরদারি রয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন