হোম অন্যান্যসারাদেশ নড়াইলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব, হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে পিটিয়ে যুবলীগ কর্মীকে হত্যা, প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

নড়াইল অফিস:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় এক যুবলীগ কর্মীকে হাতুড়ি এবং শাবল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পেড়লী চৌরাস্তা বাজার এলাকায় ভ্যান থেকে নামিয়ে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে।

নিহত যুবলীগ কর্মী হলেন আজাদ শেখ (৩২)। তিনি কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামের সালাম শেখের ছেলে। তিনি যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় উত্তেজিত লোকজন গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট করা হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজিদ মোল্যা ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুল ইসলাম শেখ ওরফে বাবু শেখ ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে এলাকায় অধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এলাকার মোল্যা ও ভূঁইয়া বংশের নেতৃত্ব দেন জারজিদ মোল্যা এবং শেখ বংশের নেতৃত্ব দেন বাবু শেখ। নিহত আজাদ শেখ ছিলেন বাবু শেখের অনুসারী। তিন-চার দিন আগে ভূঁইয়া বংশের লোকজনকে পেড়লী বাজার থেকে অপমান করে বের করে দেন বাবু শেখের লোকজন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল সকালে নেতা-কমীদের সঙ্গে পেড়লী বাজার থেকে ট্রলারে করে খুলনায় যুবলীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশে যোগ দিতে যান আজাদ শেখ। সেখান সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ট্রলারে করে পুনরায় পেড়লী বাজারে ফিরে আসেন সহকর্মীদের সাথে । পেড়লী বাজারে চা পান করে তিনি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন। প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে ভ্যান থেকে নামিয়ে লোহার তৈরি বড় হাতুড়ি এবং শাবল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। তার চিৎকারে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সাড়ে আটটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। আজাদ শেখের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত লোকজন প্রতিপক্ষের সাতটি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট করা হয়।

নিহত আজাদ শেখের চাচ লেন্টু শেখ বলেন, তাঁর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আজাদ শেখ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনায় যুবলীগের ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ থেকে পেড়লী বাজারে ফিরে চা খান। এরপর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পেড়লী চৌরাস্তা বাজার এলাকায় পৌঁছালে শহিদুল মোল্যা, শহিদুল ভুঁইয়া, আলতাফ শেখ, আলমগীর হোসেন ও লাভলুর নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন আজাদ শেখকে ভ্যান থেকে নামিয়ে হামবুর(লোহার বড় হাতুড়ি) ও শাবল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। রাতে তিনি মারা যান। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমরা দ্রুত এর বিচার চাই।

কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ তাসমীম আলম বলেন, পেড়লী ইউনিয়নে দীঘদিন যাবত দুটি গ্রুপের মধ্যে অধিপত্য কিংবা শক্তি প্রদর্শন নিয়ে দ্ব›দ্ব চলে আসছিল। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে দেন পেড়লী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজিত মোল্যা এবং অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুল ইসলাম শেখ ওরফে বাবু শেখ। এই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় পেড়লী বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষরা আজাদ শেখের ওপর হামলা চালায়। আহত আজাদ শেখ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে চিকিৎসাদীন অবস্থায় সেখানে তিনি মারা যান।

তিনি বলেন, রাতে আজাদ শেখের আত্মীয় স্বজন ও অনুসারীরা প্রতিপক্ষ মোল্যার বংশের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ছয়-সাতটি ঘর এবং খড়ের স্তুপে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় গরু ও বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ে পালানোর সময় তিনটি গরু ও একটি বৈদ্যুতিক মোটর উদ্ধার করা হয়।

ওসি বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আজাদ শেখের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এ ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন ঘটনা স্থল পরিদর্শন কালে তিনি বলেন এই ঘটনায় করা করা জড়িত প্রত্যেকটা বিষয়ে আমরা তদন্ত করবো। আর আইনশৃঙ্খলা যাতে অবনতি না হয় এ জন্য এলাকার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । পরিস্থিতি এখন শান্ত। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করার চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন