বাণিজ্য ডেস্ক:
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রসহ বাজার ব্যবস্থায় বিশ্বাসযোগ্য ও সঠিক তথ্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তীর্ণ হলে আন্তর্জাতিক বাজারে যে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে তার মোকাবিলা অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভব হবে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স (পিএমআই) তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় অর্জন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআইয়ের কার্যালয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য পিএমআইয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ।
তিনি বলেন, বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণসহ বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা পেতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্তের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়। এতে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে ব্যবসায়ী মহলসহ নীতিনির্ধারকদের বেগ পেতে হয়।
এই পিএমআই ইনডেক্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন এক ধারা সংযোজিত করবে। ১৯৪৯ সালে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই ইনডেক্স চালু হয়। এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সব দেশের ক্ষেত্রেই পারচেজিং ম্যানেজার ইনডেক্স বা পিএমআই রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে পিএমআই ইনডেক্স চালু হওয়ায় বিষয়টি দেশের জন্য একটি বড় অর্জন বলে জানান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান।
পিএমআই ইনডেক্সের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, বাংলাদেশে সঠিক তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। পাশাপাশি অনেকে তথ্য দিতে চায় না, কেউ কেউ তথ্য দিতে ভয় পায়। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্তের সন্ধান পাওয়া খুবই কঠিন। এ পরিস্থিতিতে কঠিন হলেও এই ইনডেক্স তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই ইনডেক্সের তথ্য সংগ্রহ ও কার্যক্রমের ব্যাপারে একটি নীতিমালাও গঠন করা হয়েছে। সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য জরিপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এরই মধ্যে পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে।
এই ইনডেক্সের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা আন্তর্জাতিক মানের হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর ও চীনের পিএমআই ইনডেক্স তৈরি করেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ইনডেক্স তৈরির প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইনডেক্সগুলোর কর্মপদ্ধতিকে অনুসরণ করে অর্থনীতির মূল উপাত্তগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে এই পিএমআই ইনডেক্স প্রকাশ করা হবে।
আগামী মার্চে এই ইনডেক্স প্রকাশ শুরু হবে উল্লেখ করে আগামী এক বছরের মধ্যে প্রতিমাসে বাংলাদেশের জন্য পিএমআই ইনডেক্স প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে এ সময় জানান মাসরুর রিয়াজ।
পিএমআই ইনডেক্সের বিশ্বাসযোগ্যতা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাসরুর রিয়াজ বলেন, পিএমআই ইনডেক্স অবশ্যই সর্বমহলে স্বীকৃত হবে। কারণ, যেসব প্রতিষ্ঠান এই ইনডেক্স তৈরির সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেকেরই সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে। পাশাপাশি এই ইনডেক্সে মূল বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি হলো এর তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা। নির্ভরযোগ্য উৎসের তথ্যই এই ইনডেক্সে গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। যে কেউ চাইলে এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা খতিয়ে দেখতে পারে।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই এ ধরনের ইনডেক্সের প্রয়োজন। কারণ, এতে অর্থনীতি সংক্রান্ত নানা নীতি গ্রহণ করার পাশাপাশি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থার গতিপথ বুঝতে রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ী সমাজ ও অর্থনীতির নীতিনির্ধারকদের জন্য সহজ হবে, যা এলডিসি-উত্তর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল, ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ড. ডানকান ওভারফিল্ড, এমসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান, এমসিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ও সিইও ফারুক আহমেদ প্রমুখ।