হোম Uncategorized ধানের ভাল বাজারদর পেয়ে কৃষকেরা খুশি মণিরামপুরে এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আমন ধানের আবাদ

ধানের ভাল বাজারদর পেয়ে কৃষকেরা খুশি মণিরামপুরে এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আমন ধানের আবাদ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 90 ভিউজ

মণিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি :

ধানের বাজারদর ভাল পেয়ে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কৃষকেরা খুশী হয়ে এবার বেশ উৎসাহের সাথে আমন ধান চাষ করেছে। ফলে চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আমন ধান চাষ করেছে কৃষকেরা। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বলে সংশ্লিষ্টদের মতামত থেকে জানা গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মণিরামপুর উপজেলায় ২২ হাজার ৫’শ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে। ফলে মণিরামপুর উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে আমন ধানের আবাদ হয়েছে । যা অন্যান্য বছরের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রের দাবি।

এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও ধানের বাজারদর ভাল হওয়ায় বোরো ধানের আবাদ করে কৃষকেরা বেশ লাভবান হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে আমন ধান আবাদে কৃষকেরা বেশ ঝুঁকে পড়েছে। উপযুক্ত আবহাওয়া ও সময়মত মৌসুমী বৃষ্টিপাত হওয়ায় উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকার প্রত্যেক মাঠেই আবাদকৃত ধান গাছে-পাতায় এখন ভাল ফলনের আভাস দিচ্ছে। কৃষকেরা ভাল ফলনের আশায় ধান ক্ষেতের পরিচর্যা বিশেষ করে ক্ষেতের আগাছার বিনাশ, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাম্প্রতিককালে টানা সপ্তাহব্যাপি ভারী বর্ষনে অনেক ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আক্রমন দেখা দেওয়ায় ধান ক্ষেতে কৃষকেরা কীটনাশক স্প্রে করছেন। অনেক ক্ষেতে এবার মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দেওয়ায় কী ধরনের বালাইনাশক প্রয়োগ করবেন তাই নিয়ে অনেক কৃষক বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের জোকা-কোমলপুর মাঠে যেয়ে দেখা যায়, সমস্ত মাঠ ব্যাপি কৃষকেরা আমন ধান আবাদ করেছেন। সমস্ত ধানের ক্ষেত গাছে-পাতায় ভরে গেছে। ধানের ভাল ফলন হবে তা গাছে পাতায় দেখে আগাম ধারনা করছেন কৃষকেরা । তবে কিছু কিছু ক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা বেশ চিন্তায় পড়েছেন। কোমলপুর মাঠে ধানের ক্ষেত পরিচর্যা করার সময় ওই গ্রামের সফল চাষী গোবিন্দ বিশ্বাসের সাথে দেখা হয়। তিনি ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জানান, ভাল ফলনের আশায় বেশ খরচ-খরচা করে দুই বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। গাছে-পাতায় ধান ক্ষেত ভরে গেছে। কিন্তু তার ধান ক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দেওয়ায় তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

তাৎক্ষনিকভাবে ওই কৃষককে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হলে তিনি কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা কৃষকদের কোন খোঁজ নেন না বলে অভিযোগ করেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় এস.এম লুৎফর রহমান স্মৃতি সংঘ নামের একটি কৃষক সংগঠনের প্রায় ৩’শ কৃষক বিএডিসির সহযোগিতায় বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প দিয়ে ঝাঁপা বাঁওড় থেকে খুবই কম মূল্যে সেচ সুবিধা নিয়ে হানুয়ার, জোকা ও কোমলপুর মাঠে বোরো ও আমন ধানের আবাদ করে আসছেন। গোবিন্দ বিশ্বাসের ন্যায় জোকা গ্রামের আবুল হোসেন ৮ বিঘা, কোমলপুর গ্রামের আদুল গফুর ৩ বিঘা, একই গ্রামের সুভাস সিংহ আড়াই বিঘা, কার্তিক বিশ্বাস ২ বিঘাসহ ফারুক হোসেন, মোজাম গাজী এমনিভাবে বহু কৃষক তাদের আবাদকৃত বোরো ধানের সমুদয় জমিতে এবার আমন ধানের আবাদ করেছেন। তারা সবাই আমন ধানের ভাল ফলন পাবার ব্যাপারে আশাবাদি।

সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভগিরাথ চন্দ্র জনান, আমরা কৃষি অফিসের দুইজন কর্মকর্তা ঝাঁপা ইউনিয়নে কর্মরত আছি। ইউনিয়নটি বেশ বড়। তথাপিও সাধ্যমত কৃষকদের সকল ফসলাদির জন্য যথারিতি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকদেরকে মাজরা পোকার আক্রমন রোধে কারটাপ গ্রুপের কীটনাশক ও আলটিমা প্লাস নামক তরল কীটনাশক বিঘা প্রতি ১০ গ্রাম স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার জানান, চলতি বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা আশাতীত জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন।

ধানের বাজার দর ভাল হওয়ায় কৃষকেরা এবার আমন ধান আবাদে বেশী উৎসাহী হয়েছেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সাম্প্রতিককালে টানা ভারী বর্ষনে উপজেলার নিম্ন অঞ্চলে কিছু জমিতে ধানের আবাদ ব্যহত হতে পারে। তবে অধিকাংশ এলাকায় আবাদকৃত ধানের ভাল ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদী। অতিবৃষ্টিতে কিছু কিছু এলাকায় ধানের পোকা-মাকড়ের আক্রমন দেখা দিলেও উপজেলা কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তাদেরকে সরেজমিন যেয়ে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন