জাতীয় ডেস্ক:
বাংলাদেশ এযাবৎ যে ১১টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটির চেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যয় বেশি হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় এবার ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে এবার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যয় দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। সরকার এরই মধ্যে ৭০০ কোটি টাকার বেশি ছাড় করেছে। এই জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দও দিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে জানান, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রথমে যে টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল পরে তার থেকে বাড়তে পারে। চাহিদা বেড়ে সব মিলিয়ে ব্যয় ২০০০ থেকে ২২০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেয়া হবে।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, কর্মকর্তাদের দুদিনের সম্মানীর সাথে প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণে দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই এবার ব্যয় বাড়ছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এবার নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রায় তিন হাজার নির্বাহী হাকিম এবং হাজারো বিচারিক হাকিম নিয়োজিত হয়েছেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে থাকছে প্রায় নয় লাখ মতো জনবল। এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রায় আট লক্ষাধিক আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ২০২৪ সালে ভোটার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ। একই সঙ্গে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সরঞ্জামও প্রয়োজন হচ্ছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপ্তি ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৩ দিন করা হয়েছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সম্মানীসহ জ্বালানি, পরিবহন খাতের বরাদ্দও বেড়েছে।
নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে যেসব জায়গায় টাকা ছাড় দিয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসাররা দুদিনের সম্মানী ভাতা পাবেন।
একদিনের জন্য একজন প্রিজাইডিং অফিসার ৪ হাজার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৩ হাজার এবং পোলিং অফিসার ২ হাজার করে টাকা পাবেন। এছাড়া যাতায়াত খরচ বাবদ তারা অতিরিক্ত জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে পাবেন।
এবার জাতীয় নির্বাচনের ভোটার প্রায় বারো কোটি। তিনশ আসনে মোট কেন্দ্র ৪২ হাজারেরও বেশি। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট দেয়ার গোপন কক্ষ ও বেষ্টনীর জন্য প্রতিটি কক্ষের জন্য বরাদ্দ আটশ টাকা করে।
নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট বা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা সম্পন্ন কর্মকর্তারা নির্বাচনের আগে ও পরের দুই দিনেরসহ মোট পাঁচ দিন দৈনিক নয় হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এছাড়া স্টাফ ভাতা হিসেবে তারা প্রতিদিনের জন্য পাবেন আরও এক হাজার টাকা করে।
আগের ১১টি জাতীয় নির্বাচনের ব্যয় কেমন ছিল?
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মোট ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও পরে তা আরও বেড়েছিল।
দশম সংসদ নির্বাচন: মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এ নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়। বাকি ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ কমে আসে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মোট ব্যয় হয় ১৬৫ কোটি টাকা।
অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মোট ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: পরিচালনা বাবদ ব্যয় ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মোট ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মোট ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: মোট ব্যয় হয় ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ব্যয় হয় ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
প্রথম সংসদ নির্বাচন: ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন ভোটারের এ নির্বাচনে ব্যয় হয় ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।