কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার দেবিদ্বার মুক্ত দিবস পালিত । ১৯৭১ সালের সোমবার ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়ে ছিলো দেবিদ্বার। স্থানীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করে দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, দেবিদ্বার থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পালন করেন।গৌরবময় সৈই স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সোমবার থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করেছেন উপজেলাবাসী। এ উপলক্ষ্যে সকালে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল মুক্তিযুদ্ধ চত্বর ও গণকবরে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেম।
এদিকে দেবিদ্বারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, মুক্তিযুদ্ধ চত্বর ও গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দুইবারের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ওমানী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আব্দুস সামাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমা বেগম, দেবিদ্বার পৌরসভার চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শামীম, সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সফিকুল আলম কামাল ভিপি কামাল সহ সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
এব্যাপরে সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম জানান, ১৯৭১-এর ৩১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৫ সদস্যের পাকসেনার একটি দল কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের দিকে যাত্রা শুরু করলে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাকহানাদার দলটিকে দেবিদ্বারের ভিংলা বাড়ি এলাকায় জনতা প্রতিরোধ করে। সেদিন মহাসড়কের ভিংলাবাড়ি থেকে জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় পাকহানাদারদের সাথে মুক্তিকামী জনতা এক অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দিনব্যাপী যুদ্ধে ৩৩ জন শহীদ হন। আহত হন বহু বাঙালী। হত্যা করা হয় ১৫ পাকসেনাকে।
১৪ এপ্রিল বরকামতা গ্রামে পাকহানাদাররা আক্রমণ চালায়। এ খবর পেয়ে কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হাফেজ ও আবদুল হালিম পুলিশের নেতৃত্বে হাজার হাজার বাঙালি মাত্র দুটি থ্রি-নট থ্রি রাইফেল ও লাঠি হাতে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে শত্রু সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাইফেলের গুলিতে পাকবাহিনীর ৫ সেনা নিহত হলে তারা পিছু হটে। কিন্তু ওই রাতেই পাকসেনারা পুরো বরকামতা গ্রামটিকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
৬সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার থানার বারুর গ্রামে হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বাচ্চু মিয়া, শহীদুল ইসলাম, আলী মিয়া, আবদুস সালাম, সফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেনসহ ৭ জন শহীদ হন।১৭ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ বাঙালিকে ধরে এনে দেবিদ্বারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়।
পাকসেনারা ধামতী ও ভোষনা গ্রাম দুটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাঁটি বলে মনে করতো। সে কারণে ২৯ নভেম্বর পাকসেনাদের একটি বিশাল বহর হঠাৎ করেই আক্রমণ করে ভোষনা গ্রামের ১৬টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং ৬ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। এ দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রাজামেহের এলাকায় এক মাইন বিস্ফোরণে পাকসেনাদের ৭ জন সদস্য নিহত হলে ওই এলাকার দু’পাশের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার সব বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
৪ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী-মিত্রবাহিনী যৌথ আক্রমণ চালায় পাকহানাদারদের ওপর। এসময় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতুটি মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়।মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংক বহর এদিন বুড়িচং বাহ্মণপাড়া হয়ে দেবিদ্বারে আসে। হানাদাররা ওই রাতেই দেবিদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন দল দেবিদ্বার সদরে প্রবেশ করে। দেবিদ্বারের জনতা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে।