হোম দেবহাটা দেবহাটায় আ.লীগ নেতা-স্বাস্থ্যকর্মীসহ একাধিক বাড়িতে দুর্বৃত্তের হামলা

দেবহাটায় আ.লীগ নেতা-স্বাস্থ্যকর্মীসহ একাধিক বাড়িতে দুর্বৃত্তের হামলা

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 17 ভিউজ

মাহমুদুল হাসান শাওন:

সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেকটাই নিম্নমূখী হয়ে পড়েছে। রাত নামতেই আত্মগোপন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন মামলার আসামি ও দাগি অপরাধীরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রাতের আঁধারে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও গ্রামপুলিশ সহ বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও বেড়েছে তুলনামুলক হারে। এসব ঘটনার দু-একটি প্রকাশ্যে আসলেও, রাজনৈতিক কারনে মুখ খুলতে বা পুলিশের সহায়তা নিতে পারছেন না হামলার শিকার পরিবার গুলো।

তাছাড়া চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, জমি ও মৎস্যঘের দখলের পাশাপাশি উপজেলার প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদী বেষ্টিত সীমান্তে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে চোরাচালান। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি)’র নজরদারি উপেক্ষা করে সীমান্ত নদী ইছামতি পেরিয়ে দেশে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক ও বিষ্ফোরক দ্রব্য সহ চোরাচালানি নানা পণ্য। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকেও ভারতে পাঁচার হচ্ছে স্বর্ণ, রৌপ্য, কাসা-পিতল, সীমানা পিলার, এলপিজি গ্যাস সহ দেশীয় নানা মূল্যবান সম্পদ।

গেল আগষ্টে সরকার পতনের পর থেকে দেশ জুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্বের মতো কঠোর অবস্থানে না ফেরার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছে চোরাকারবারি ও অপরাধীরা।

গত এক সপ্তাহে রাতের আঁধারে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম, দেবহাটা উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রর স্বাস্থ্য সহকারী সুশান্ত অধিকারী, কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরুল ইসলাম সহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেসময় এসব বাড়িতে ভাংচুর, মহিলাদের গালিগালাজ ও হুমকি, এমনকি বয়োঃবৃদ্ধদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী সুশান্ত অধিকারী বলেন, গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে ৫/৬টি মোটরসাইকেলে আসা একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার হাদিপুরস্থ বাড়িতে অতর্কিত হামলা ও ভাংচুর চালায়। আমিসহ আমার ঘুমন্ত পরিবার তাদের অতর্কিত হামলায় আতংকিত ও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। হামলাকারীদের ভয়ে প্রতিবেশিরাও আমাদের বাঁচাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সাহস করেনি। একপর্যায়ে আমি দেবহাটা থানার ওসিকে ফোন করে সহায়তা চাই, কিন্ত পুলিশ পৌঁছানোর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম বলেন, গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে বহেরা বাজার সংলগ্ন আমার বাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তাদের বেশিরভাগেরই মুখ ঢাকা ছিল। আমাকে বাড়িতে না পেয়ে তারা বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং প্যারালাইসিসে আক্রান্ত আমার শয্যাশায়ী বৃদ্ধ বাবাকে লাথি মেয়ে বিছানা থেকে মেঝেতে ফেলে দেয়। পরে তারা আমার ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি বলেন, যদিও দেবহাটা শান্তিপ্রিয় এলাকা। জুলাইয়ে বৈষম্য বিরোধীদের আন্দোলনের সময় দেবহাটা উপজেলাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্ত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেবহাটা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটায় নিরাপত্তা জণিত কারনে আমিসহ দলের অনেক নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছি। বাড়িতে আমাদের অনেকের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় সাম্প্রতিক সময়ে একদল দুর্বৃত্ত রাতের আঁধারে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করছে। এতে আমাদের পরিবার পরিজন আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে ১০/১৫ জন দুর্বৃত্ত লাঠিশোঠা নিয়ে মাঝ পারুলিয়ায় আমার বাড়িতে হামলা করে। আমাকে বাড়িতে না পেয়ে তারা আমার বৃদ্ধ মা-বাবার সাথেও দুর্ব্যবহার করেন। পরে আমাদের অন্যান্য নেতাকর্মীসহ স্বাস্থ্যকর্মী, গ্রামপুলিশ সহ একাধিক নির্দলীয় ব্যক্তির বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে।

এসব হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান ও ওসি হযরত আলীকে জানানো হয়েছে। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে তারা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ একাধিক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা শুনেছি। এসব বিষয়ে থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সীমান্ত চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দেবহাটা থানার ওসি হযরত আলী বলেন, ঘটনা গুলির কিছু রজনৈতিক ও কিছু শত্রুতামুলোক বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছে। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশি তৎপরতা অব্যহত রয়েছে এবং আমি নিজেও রাত্রিকালীন টহলে থাকছি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন