হোম খুলনাসাতক্ষীরা দেবহাটায় দেশি শোল মাছ চাষ করে ভাগ্য বদলে গেল প্রভাষক মিজানুরের

দেবহাটায় দেশি শোল মাছ চাষ করে ভাগ্য বদলে গেল প্রভাষক মিজানুরের

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 92 ভিউজ
আব্দুল্লাহ আল মামুন:
গ্রামীণ আদায়ের এখন নতুন এক স্বপ্নের গল্প রচিত হচ্ছে। পড়াশোনা শেষে করেও শিক্ষকতা অনেকেই জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার নাজিরঘের গ্রামের প্রভাষক মিজানুর রহমান লিখছেন এক অন্যরকম সাফল্যের ইতিহাস। সখিপুর ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের এই প্রভাষক দেশি শোল মাছ চাষ করে হয়েছেন লাখপতি, হয়েছেন এলাকার অনুপ্রেরণা। মিজানুর রহমানের গল্পটি শুরু হয় কয়েক বছর আগে। শিক্ষকতা পেশায় থাকা অবস্থায় তিনি দেখতেন, এলাকায় অনেকেই বিদেশি জাতের মাছ চাষে ব্যস্ত, অথচ দেশি প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সেই চিন্তা থেকেই শুরু হয় তাঁর ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। তিনি বলেন, “গত বছর দেবহাটা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। পরে ১০ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক, ভাবে দেশি শোল মাছের চাষ শুরু করি। প্রথম বছরেই প্রায় ৯০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।” সরেজমিনে দেখা যায়, মিজানুর রহমানের পুকুরটি মিরে রাখা হয়েছে শক্ত জালের মেট দিয়ে। এর উদ্দেশ্য সাপ, বিষাক্ত পোকা-মাকড় ও অন্যান্য শত্রু থেকে মাছকে রক্ষা করা। তিনি জানান, সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত তদারকি না থাকলে এই চাষ সফল হয় না।”আমি প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পুকুরে যাই, পানির মান দেখি, খাবার দিই। শোল মাছ বেশ সংবেদনশীল, তাই পানি পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন মিজানুর।
শোল মাছ চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এক বছরে দুইবার চাষ করা যায়। এতে আয়ও দ্বিগুণ হয়। মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে বাজারে দেশি শোল মাছের চাহিদা ব্যাপক। প্রতিকেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তিনি বলেন, “বাজারে দেশি মাছের কদর অনেক। মানুষ এখন নিরাপদ ও দেশি মাছ খেতে চায়। ফলে এই মাছ বিক্রি নিয়ে কোনো চিন্তা থাকে না।”প্রভাষক মিজানুরের বাবা আব্দুল হামিদ মোড়ল গর্বভরে বলেন, “আমার ছেলে দুই বছর ধরে দেশি শোল মাছ চাষ করছে।এখন সে জমি কিনেছে, বাড়ি করেছেআমরা সত্যিই গর্বিত। সে নিজের পরিশ্রমে স্বাবলম্বী হয়েছে।”গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মামুন জানান, মিজানুরের সাফল্যের কথা শুনে তাঁরা পুকুর পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি বলেন, “আমরা নিজের চোখে দেখেছি, শোল চাষে সত্যিই লাভজনক ফল পাওয়া যায়। আমরাও শিগগিরই এই চাষ শুরু করবো। দেবহাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বলেন বর্তমানে দেশি প্রজাতির মাছ যেমন শোল, টাকি,মাগুর,শিং,কৈ,এগুলো বিলুপ্তির পথে। তাই আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশি প্রজাতির মাছ চাষে উৎসাহিত করছি। তিনি আরও বলেন, “দেশি মাছ চাষ শুধু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়, এটি পরিবেশ ও ভারসাম্য রক্ষায়ও জলবায়ু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেউ চাইলে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ, পোনা ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করি।”স্থানীয় অর্থনীতিতে দেশি শোল মাছ চাষ ইতোমধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কৃষকরা এখন মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বিশেষ করে যারা আগে ধান বা পাট চাষ করতেন, তারা এখন পুকুরে দেশি মাছ চাষ করে দ্বিগুণ আয় করছেন।মিজানুর রহমানের হিসাব মতে, ১০ কাঠা জমিতে শোল মাছ চাষে খরচ হয় প্রায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা। বছরে দু’বার চাষে গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো লাভকরা যায়। এভাবে ছোট পরিসরেও একটি পরিবার স্বাবলম্বী হতে পারে।স্থানীয় কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, “আগে ভাবতাম মাছ চাষ মানে শুধু রুই, কাতলা, মৃগেল। এখন দেখছি দেশি মায়ও ভালোভাবে চাষ করা যায় এবং লাভও বেশি। আরেকজন পথচারী হাসিনা বেগম বলেন, “আমরা বাজার থেকে এই মাছ কিনি, স্বাদে অতুলনীয়। দেশি মাছের চাহিদা থাকলে এমন চাষ বাড়ানো উচিত।”বাংলাদেশে দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, পোনা সরবরাহ, খাদ্য ও ঋণ সহায়তার পাশাপাশি এখন অনেক প্রকল্পে দেশি প্রজাতির মাছের সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।দেবহাটা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি গ্রামে অন্তত একজন হলেও দেশি মাছ চাষে সফল উদ্যোক্তা হোক। এটি দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে।”সঠিক আজ প্রভাষক মিজানুর রহমান শুধু একজন সফল চাষি ননতিনি গ্রামীণ উদ্যোক্তা সাফল্যের এক প্রতীক। শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি তিনি। দেখিয়েছেন, আগ্রহ, পরিশ্রম ও পরিকল্পনা থাকলে গ্রামীণ অর্থনী-ি ততেও লাখপতি হওয়া যায়।তিনি হাসিমুখে বলেন, “আমি চাই, আমার মতো অন্যরাও দেশি মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হোক। এতে আমাদের গ্রাম, আমাদের দেশ, সবাই উপকৃত হবে।”

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন