জাতীয় ডেস্ক :
বেড়েই চলেছে লাশের সারি। স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। একে একে আসছে মৃত্যু সংবাদ। হাসপাতালের বারান্দায় বসে কাঁদছেন স্বজনহারা মানুষ। দুর্ঘটনার পর থেকেই অ্যাম্বুলেন্সে করে একে একে নেয়া হচ্ছে মরদেহ। কনটেইনারের ডিপোতে এখনো দেখা মিলছে ছিন্ন ভিন্ন লাশের অংশবিশেষ। না জানি এ সংখ্যা আরও কত দীর্ঘ হবে?
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এক এক করে বেড়েই চলছে। সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ মোট ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন প্রায় চার শতাধিক। এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে এখনও কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট।
পানি সংকটে কনটেইনার ডিপোর আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। ভোরের দিকে এসে পানি ফুরিয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে পারছেন না।
শনিবার (৫ জুন) বিকালে সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন সময় সংবাদকে এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিপোয় থাকা অনেকগুলো কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারক্সাইড ছিল। তাপের সংস্পর্শে এই রাসায়নিক পদার্থটি বিস্ফোরণ হয়। আগুন লাগার পর এসব পদার্থ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, নিহতদের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাকিদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
যাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তারা হলেন- কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মনিরুজ্জামান, ভোলার দক্ষিণ বালিয়ারার হাবিবুর রহমান, বাঁশখালীর রবিউল আলম, মুমিনুল হক, মহিউদ্দিন, তোফায়েল আহমেদ, নোয়াখালীর চাটখিলের আলাউদ্দিন, মো. সুমন, যশোরের ইব্রাহীম হোসেন, রানা মিয়া, নিপুণ চাকমা, শাকিল, আফজাল হোসেন ও নয়ন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় দগ্ধ আরও দুই শতাধিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শনিবার (৪ জুন) রাত ৮টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুনের সূত্রপাত হয়। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
রাসায়নিক থাকায় একটি কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্থানীয় শ্রমিকসহ অনেকে হতাহত হন। পুড়ে যায় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িও।