কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী কুলিয়ারচরের এক বিপ্লবী মহারাজ। যিঁনি ৩৪ বছর কাটিয়েছেন জেলে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অবিসংবাদী নেতা ছিলেন তিনি। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এ বাংলার মহারাজ । যিঁনি দেশ ও মানুষের কথা ভেবে থেকেছেন চিরকুমার। যারফলে আজ তার পৈত্রিক সম্পদ দিন দিন বে-দখল হয়ে যাচ্ছে। তাঁর স্মৃতির স্বরণে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রঙ্গনে একটি পাঠাগার আর তাঁর গ্রামের বাড়িতে বর্তমানে একটা পুকুর ছাড়া কোন কিছু অবশিষ্ট নেই এখন।
১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর শুধু কারাগারেই কাটিয়েছে তিনি। ১৯৬৭ সালে তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘জেলে তিরিশ বছর ও পাক- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি এ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছিলেন, “পৃথিবীতে সম্ভবত আমিই রাজনৈতিক আন্দোলন করার কারণে সর্বাধিক সময় জেলখানায় অতিবাহিত করেছি’। মাঝখানে দু- এক মাস বিরতি ছাড়া আমি টানা ৩০ বছর জেলখানায় কাটিয়েছি। আমার স্বপ্ন সফল হয় নাই, আমি সফলকাম বিপ্লবী নই। আমার ব্যর্থতার কারণ, আমার দুর্বলতা নয়। আমি কখনও ভীরু ছিলাম না। আমার জীবনে কখনও দুর্বলতা দেখাই নাই। আমি আমার চরিত্র নির্মল ও পবিত্র রাখতে সক্ষম হইয়াছি। অর্থলোভ আমার ছিল না। এক সময় হাজার টাকা আমার কাছে আসিয়াছে, কিন্তু সে টাকা নিজের ভোগ- বিলাসের জন্য ব্যয় করি নাই। মৃত্যুভয় আমার ছিল না।”
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিঁনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হোন। ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান সরকার তাঁকে দুই বছরের জন্য কারারুদ্ধ করে রাখে। তখন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পরেন। এবং চলে আসেন গ্রামের বাড়ি কুলিয়ারচরের কাপাসাটিয়া গ্রামে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর তিঁনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাঁপানী বেরে যায় হৃদরোগও ধরা পড়ে। ১৯৭০ সালে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে থেকে অনুমতি পায় তিনি। সর্বশেষ বাংলাদেশের বাইরে ৯ আগস্ট মারা যান তিনি।
