আন্তর্জাতিক ডেক্সঃ
ফিলিস্তিনিদের বুকভরা সাহসের কথা সর্বজনবিদিত! দখলদারদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় তাদের ছোট ছোট শিশুরা। ইসরায়েলি আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে গুলতি নিয়ে লড়ার সাহস দেখায় কেবল ফিলিস্তিনিরাই। কিন্তু গত কয়েকদিনে ঘটনাচিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। এবার গোলার বদলে গোলা ছুড়ে ইসরায়েলকে দাঁতভাঙা জবাব দিচ্ছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। তাদের রকেটবৃষ্টি থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে ইসরায়েলিদের বহু স্থাপনায় আঘাত হেনেছে ফিলিস্তিনি রকেট। কিন্তু ইসরায়েল বারবার দাবি করছে, এসব হামলায় নাকি তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলিরা কি তবে সত্যটা গোপন করছে?
পবিত্র রমজান মাসের শেষের দিকে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক দমন অভিযান চালায় দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। এর প্রতিবাদে গত সোমবার পর্যন্ত তেল আবিবকে সতর্কতামূলক সময়সীমা বেধে দিয়েছিল ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
সংগঠনটির বেধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে দমন অভিযান বন্ধ না হওয়ায় গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে এ যাবৎকালের সবচেয়ে জোরালো রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত নয়জন নিহত হয়েছেন। হামলা অব্যাহত রয়েছে শনিবারও।
ইসরায়েলের আশদুদ শহরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা কান নিউজকে জানিয়েছেন, শনিবার সকালে হামাস একঝাঁক রকেট ছুড়েছে। এতে শহরটির একটি ছয়তলা আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হননি বলে দাবি করেছেন ওই কর্মকর্তা।
জেরুজালেম পোস্টের খবর অনুসারে, এর কিছুক্ষণ পরেই আশদুদে আঘাত হানে আরও দুটি রকেট। এর মধ্যে একটি রকেটের আঘাতে বন্দরের একটি কারখানায় আগুন ধরে যায়। তবে এসময়ও কেউ হতাহত হননি বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার সকালে বীরশেবা এলাকার একটি আবাসিক ভবনে রকেট হামলা হয়েছে। এতে ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি হলেও কেউ আহত হননি।
হামাসের ছোড়া আরও দুটি রকেট গাজা সীমান্তবর্তী কয়েকটি বাড়িতে আঘাত হেনেছে। এর মধ্য একটি রকেট সরাসরি একটি বাড়ির ওপর পড়ায় সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের আরও দুটি বাড়ি।
আরেকটি রকেট আছড়ে পড়েছে ইসরায়েলের সাদেরত শহরে। এসব ঘটনায় একজনও হতাহত হননি বলে দাবি করছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, গত কয়েকদিনে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় দুই হাজার রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।
গত বৃহস্পতিবার থেকে গাজা ও পশ্চিম তীরে আক্রমণের সংখ্যা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীও। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতেই গাজায় মাত্র ৪০ মিনিটে ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে দখলদাররা।
তাদের হামলায় গত সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ৩৬ শিশুসহ অন্তত ১৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার।
হানাদারদের আক্রমণের মুখে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি ঘরছাড়া হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া ইসরায়েল বোমা মেরে উপত্যকার ৩১টি স্কুলকে ধ্বংসস্তূপ বানিয়েছে বলে জানিয়েছে শিশু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।