আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। সংঘর্ষের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছে। ইতোমধ্যে একজন থাই সৈন্য এবং চারজন কম্বোডিয়ান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সংঘর্ষের ফলে নতুন করে উভয় দেশেই নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। থাইল্যান্ডের সেকেন্ড আর্মি রিজিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিয়ানচে প্রাদেশিক প্রশাসনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী বেশ কিছু গ্রামবাসী নিরাপদে সরে যাচ্ছেন। সংঘর্ষের কারণে কম্বোডিয়ান প্রদেশেও স্কুল স্থগিত করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে থাই সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, উবোন রাতচাথানি প্রদেশে একজন থাই সৈন্যের মৃত্যুর পর কম্বোডিয়ার আক্রমণ ‘দমন করার জন্য’ থাইল্যান্ড বিমান পাঠায়।
মেজর-জেনারেল উইনথাই সুভারির মতে, তাদের কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছেন।
থাই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ান সৈন্যরা সোমবার ভোর থেকে ‘ছোট অস্ত্র এবং বাঁকা অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছে।’ সকাল ৭টার দিকে তাদের সৈন্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডের এই বিবরণের বিরোধিতা করেছে। এক বিবৃতিতে কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় থাই বাহিনীই প্রথম আক্রমণ শুরু করেছিল।
তারা বলছে, কয়েকদিন ধরে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের পর এই আক্রমণ চালানো হয়। তবুও কম্বোডিয়ার সেনারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
কম্বোডিয়ার তথ্যমন্ত্রী নেথ ফেকট্রা এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, থাই হামলায় কমপক্ষে চারজন কম্বোডিয়ান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী প্রদেশ ওদ্দার মিয়ানচে ও প্রিয়াহ ভিহিয়ারে এসব মৃত্যু হয়েছে এবং আরও ১০ জন আহত হয়েছেন।
থাই সেনাবাহিনী বলছে, কম্বোডিয়ার গুলিতে দুই থাই সৈন্য আহত হয়েছে এবং থাই সেনারা পাল্টা গুলি চালায়। এর ফলে প্রায় ২০ মিনিট ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
কম্বোডিয়া বলেছে, থাই পক্ষ প্রথমে গুলি চালিয়েছিল এবং তাদের নিজস্ব সৈন্যরা প্রতিশোধ নেয়নি।
ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
জুলাই মাসে পাঁচদিনের মারাত্মক সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল দুই প্রতিবেশী। কিন্তু নতুন এই হামলা সহিংসতার সর্বশেষ সূত্রপাত। পূর্বের সংক্ষিপ্ত কিন্তু মারাত্মক সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত এবং আনুমানিক ৩ লাখ লোক অস্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত হন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে দুই দেশের মধ্যে একটি বর্ধিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
তবে থাইল্যান্ড গত মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন স্থগিত করবে বলে জানায়। স্থলমাইন বিস্ফোরণে তাদের একজন সৈন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর এই ঘোষণা আসে।
কম্বোডিয়া ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের দায় অস্বীকার করে বলেছে, এই স্থলমাইনটি অতীতে পুঁতে রাখা হতে পারে, তবে এখন তারা এসব নিস্ক্রিয় করছে।
থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল সোমবার বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড কখনো সহিংসতা কামনা করেনি। আমি আবারও বলতে চাই, থাইল্যান্ড কখনো যুদ্ধ বা আক্রমণ শুরু করেনি। তবে কখনো সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না।’
কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘পূর্ববর্তী সমস্ত চুক্তিকে সম্মান করার এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত সমাধানের চেতনায় দাঁড়িয়ে, কম্বোডিয়া দুটি হামলার সময় কোনো প্রতিশোধ নেয়নি। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হুন মানেটের বাবা হুন সেনও সম্মুখসারির কম্বোডিয়ান বাহিনীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মঙ্গলবার থাইল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গেমসে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের স্বাভাবিকভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরিবেশ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
