আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তোশাখানা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল) প্রধান নওয়াজ শরিফ। তবে আত্মসমর্পণের পর তার জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। খবর ডন।
প্রতিবেদন মতে, মূলত রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে অবৈধভাবে মূল্যবান উপহার ও বিলাসবহুল গাড়ি নেয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় তার এই আত্মসমর্পণ।
তোশাখানা মামলায় ২০২০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির পাশাপাশি নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেন নি।
স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার চারদিন পর মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ইসলামাবাদে অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পেয়েছেন তিনি।
তবে একই ধরনের মামলায় এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। গত ৫ অগস্ট ইসলামাবাদের বিশেষ আদালত তোশাখানা মামলায় ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করে। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়।
আগামী জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচনে নওয়াজ অংশ নিতে না পারলেও, নিজ দল পিএমএল-এনের প্রচারণায় সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নওয়াজ তিনবার পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথমবার ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত। আর তৃতীয়বার ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
তবে ক্ষমতার মেয়াদের শেষ দিকে ২০১৭ সালে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করেন আদালত। ফলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন নওয়াজ।
এরপর ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৮ সালে দুর্নীতির দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। এতে তার ১৪ বছর কারাদণ্ড হয়। তবে দণ্ডিত হলেও নওয়াজকে জেলে যেতে হয়নি।
শারীরিক অসুস্থতার জন্য বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাইলে আদালত তাকে অনুমতি দেন। এরপর ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান।
গত বছর (২০২২) ইমরান খান সরকারকে উৎখাত করার পর পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসে পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। যার প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজের ছোট ভাই শাহবাজ় শরিফ।
শাহবাজ়ই প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভোটের আগে পাকিস্তানে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন নওয়াজ। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিমানবন্দরে নামার পরই তিনি গ্রেফতার হতে পারেন এমন আশঙ্কাও ছিল।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পাকিস্তানের একটি আদালত নওয়াজকে আগাম জামিন দিয়ে জানান, আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত নওয়াজকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে নওয়াজের বিরুদ্ধে মামলাগুলো চলবে বলে জানান আদালত।
নওয়াজের আইনজীবীরা জানান, আইনি উপায়েই মামলাগুলো লড়বেন তাদের মক্কেল। নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ হওয়ায় ভোটে লড়তে পারবেন না নওয়াজ। তবে তার দলের বক্তব্য, দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নওয়াজই।