অনলাইন ডেস্ক:
বাগেরহাটে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে নাগরিক সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের। দীর্ঘদিন ধরে সেবা প্রত্যাশীরা বিড়ম্বনার শিকার হলেও প্রতিকার মিলছে না।
জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা মোহা. খালিদ হোসেন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণের কথা স্বীকার করে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা তেলিগাতী ইউনিয়দ পরিষদে যেতে ভয় পান সাধারণ মানুষ। কখন যেন ছাদ ভেঙে পড়ে মাথায়। পরিষদের পুরো ভবন-ই ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষের মেঝেতে ম্যাট বিছিয়ে অফিস করতে হয়।
এদিকে কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা প্রত্যাশীদের ভিড়। কেউ আসছেন বয়স্ক-বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে, কেউ আবার টিসিবির পণ্য নিতে। আর জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তেলিগাতি ও বাধাল ইউনিয়ন পরিষদ নয়, রায়েন্দা, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, বলইবুনিয়া, গাংনী, কলাতলা, রামচন্দ্রপুর, বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি পরিষদ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে অন্তত ৯টি পরিষদ।
জেলায় ৭৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ।
বয়স্কভাতা নিতে আসা কাকলী রানী দাস বলেন, মানুষের ভিড়ের মধ্যে কোথায় বসব। ভবনে কোনো জায়গা নাই, পরিত্যক্ত ভবন। তাই গাছের নিচে বসে আছি। প্রচণ্ড গরম আমার মতো অনেক মানুষ সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছে।
অপর সেবাগ্রহীতা নাজনীন বলেন, টিসিবির কার্ড নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আসি। পরিষদের পুরাতন ভবন ভেঙে পড়ছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে। আমরা কয়েকবার এখানে এসে নানা সমস্যায় পড়ছি।
পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদা আকতার বলেন, ‘পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অনেক কষ্ট করে নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গত বছর খুলনা বিভাগের মধ্যে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে বিভাগীয় পর্য়ায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি। দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’
অপরদিকে বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল অহিদ বলেন, ‘কেউ আসছেন বয়স্ক-বিধবা বা প্রতিবন্ধী ভাতা নিতে কেউ আবার টিসিবির পণ্য নিতে। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে কার্যক্রম চালাতে হয়। আশপাশে কোনো ভবন নেই, যে ভাড়া নেব। আমরা দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানাই।’
সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তিদের কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, ‘নতুন ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ভবনগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
বাগেরহাট এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, জেলায় ৭৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্য়ায়ে ৪৮ টি ইউনিয়ন পরিষদ নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও ২৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ। এরমধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ও গাংনী পরিষদের নিজস্ব জায়গা নেই। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধারা ইউনিয়ন পরিষদ বরাদ্দের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে তৃতীয় পর্যায়ে নতুন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।