বাণিজ্য ডেস্ক:
লক্ষ্মীপুরে তিন শতাধিক গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রাহকরা এসে এনজিওটির বন্ধ দেখতে পান। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
জানা গেছে, প্রায় মাস খানেক আগে লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গো-হাটা-তেরবেকি সড়কের পাশে লামচরী এলাকায় একটি ভবনের ফ্লাট ভাড়া নিয়ে ‘সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি এনজিও সংস্থা তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। ভবনের দ্বিতীয় তলায় এনজিওটির নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো ছিল। অফিসটিতে ওই এনজিওর সাত কর্মকর্তা ও কর্মী ছিলেন। এদের মধ্যে দুজন ছিলেন নারী।
স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাধারণ লোকজনকে ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহক প্রতি ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন ওই এনজিও কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো। রোববার থেকে গ্রাহকদের ঋণের টাকা দেবার কথা ছিল সংস্থাটির। কিন্তু গ্রাহকরা অফিসে এসে তালাবন্ধ দেখতে পান। প্রতিষ্ঠানের দেয়া মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
গ্রাহকরা জানান, ঋণতো দূরে কথা এখন মূলধন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে ‘সাউথ প্যাসিফিক বিজনেস ডেভেলপমেন্ট’ নামের ওই সংস্থাটি। তাদের ঋণ দেবার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রলোভনে ফেলেছে ওই এনজিও সংস্থার প্রতারক চক্র।
পৌর এলাকার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুন্নি আক্তার জানান, তিনি ওই এনজিও সংস্থা থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নেয়ার আশায় সোনার চেইন বন্ধক দিয়ে ১৮ হাজার টাকা তুলে দেন ওই এনজিও কর্মীর হাতে। তিনদিন পর অফিসে এসে দেখেন এনজিও সংস্থার কেউ নেই। অফিসে তালা ঝুলতে দেখেন তিনি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। ঋণ তো দূরে কথা, এখন মূলধন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে ওই এনজিওটি।
মুন্নির প্রতিবেশী শাহিনুর বেগম জানান, তিনি ব্যবসা করার জন্য তিন লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে আগাম জমা দিয়েছেন ১৭ হাজার টাকা। তাদের এলাকার ৭ জন গ্রাহকের কাছ থেকে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা আগাম হাতিয়ে নিয়েছে ওই এনজিও সংস্থার লোকজন।
ভবানীগঞ্জের চরভূতা গ্রামের নজরুল ইসলাম তার ছেলে বিদেশ পাঠাতে সেই এনজিও সংস্থাতে সাড়ে চার লাখ টাকা লোন প্রস্তাব করেন। এ জন্য জামানত বাবদ ওই এনজিওকে আগাম দিতে হয়েছে ৩৩ হাজার টাকা।
মুন্নি, শাহিনুর, নজরুল ইসলামের মতো এমন অন্তত তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ঋণ নেবার আশায় ওই এনজিও কর্মীদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন। কেউ ধারদেনা করে, কেউ স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে; আবার কেউবা জমানো টাকা তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। সংস্থাটির কর্মীর হাতে বিভিন্ন অংকের টাকা জমা দিয়ে একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন খোদেজা, মনিকা আক্তার, হাজেরা বেগম, নুর নাহার, বকুল বেগম, আক্তার জাহান, জ্যোৎস্না, রিয়াজ, আবুল কাশেম, সালেহা বেগম, ফাতেমা বেগম, শারমিন, জ্যোৎস্না, আজাদ, খোরশেদ আলম, হুমায়ুন কবির, হালিমাসহ অনেকে। তাদের ঋণ দেবার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রলোভনে ফেলেছে একটি প্রতারক চক্র।
এনজিওটির অফিস ছিল তিনতলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায়। ভবনের মূলফটকে তালাবন্ধ দেখা গেছে। ভবনের মালিককেও পাওয়া যায়নি। পাশেই এলাকায় ছিল ভবন মালিকের বাড়ি, বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এনজিওর নামে প্রতারকরা গ্রাহকদের হাতে শুধুমাত্র তাদের ভিজিটিং কার্ড এবং লিফলেট দিয়েছেন। তবে টাকা জমা নেয়ার জন্য লিখিত কোনো কাগজ দেননি। ভিজিটিং কার্ডে এনজিওর নাম এবং ঢাকা অফিসের ঠিকানা দেয়া রয়েছে। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে আব্দুল আসাদ (রাসেল) নামে একজনের নাম রয়েছে। সেখানে তার ব্যবহৃত এ ‘০১৩০২৬৬০১৭৮’ নাম্বারটি দেয়া থাকলো সেটি এখন বন্ধ রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, প্রতারণার তথ্য পেয়ে আমরা সেখানে গিয়েছি। তবে প্রতারকদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।