হোম এক্সক্লুসিভ তিন আসামি গ্রেফতারে দুই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন

জাতীয় ডেস্ক:

কক্সবাজারে হত্যাকাণ্ডের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে ৩ আসামিকে গ্রেফতারের মাধ্যমে ২টি খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ড দুটি নারী সংঘটিত বলেও দাবি করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি টিপ ছোরাও উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২৬ জুন) বিকেলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতাররা হল খুরুশকুলে ইজিবাইক চালক আবদুল আজিজ হত্যাকাণ্ডের আসামি জাকির হোসেন (৩০) ও মো. শাকের (২৩)। আর কিশোর এবাদুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের আসামি জাহিদুল ইসলাম রাকিব (১৭)।

পুলিশ জানায়, গত ২৩ জুন সকালে কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়নের ডিসি রোডে রাস্তার পাশে ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে পরিবারের লোকজন এসে মরদেহটি ইজিবাইক চালক আবদুল আজিজের বলে শনাক্ত করে। কিন্তু পাওয়া যায়নি ইজিবাইকটি। পরে মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

‘ইজিবাইক চালক আবদুল আজিজের হত্যাকাণ্ডের একদিন পর ২৪ জুন দুপুরে কক্সবাজার শহরের পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া সৈকতের ঝাউবাগানে অজ্ঞাতপরিচয় একজনের মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করে। এসময় পরিবারের স্বজনরা মরদেহটি এবাদুল্লাহ বলে শনাক্ত করে। মরদেহটি পেটে ১১টি ধারালো ছোরার আঘাত ও গলায় প্লাস্টিকের রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন পায় পুলিশ। পরে এবাদুল্লাহ মরদেহও মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।’

পুলিশ আরও জানায়, হত্যাকাণ্ড দুটি রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসন। দীর্ঘ ৯৬ ঘণ্টার0 অভিযানে সোমবার সকালে ২টি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ২টি ছোরা।

সোমবার বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম দাবি করেন, হত্যাকাণ্ড দুটি নারী সংঘটিত। যা গ্রেফতার আসামিরা স্বীকার করেছেন।

ইজিবাইক চালক আবদুল আজিজ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গেল ২৩ জুন সংঘটিত ইজিবাইক চালক আবদুল আজিজ হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (২৬ জুন) ভোরে কক্সবাজার সদর মডেল থানার একটি চৌকস দল প্রযুক্তির মাধ্যমে খুরুশকুল পূর্ব হামজার ডেইল এলাকা থেকে জাকির হোসেন ও মো. শাকেরকে গ্রেফতার করে। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো টিপ ছোরা উদ্ধার করা হয়। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার আসামি জাকির হোসেন ও মো. শাকের পরস্পর আপন চাচাতো ভাই। শাকের টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা। শাকের গত ১০ দিন আগে জাকির হোসেনের বাড়িতে এসে দেখা করে। সেই সময় শাকের জাকিরকে বলে যে, তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা পারভিনকে আবদুল আজিজ বিয়ে করেছে। সেই কারণে পারভিনের স্বামী আজিজকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে তার ইজিবাইক নিয়ে যেতে হবে। জাকির হাকে সহযোগিতা করার কথা বলে। পরবর্তীতে পারভিনের স্বামী আজিজের সঙ্গে জাকিরের মোবাইল ফোনে কথা হয়।

গত মঙ্গলবার (২০ জুন) জাকির ও শাকের আজিজের সঙ্গে দেখা করতে পাহাড়তলীতে আবদুল আজিজের বাড়িতে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে জাকিরের সঙ্গে আজিজের মোবাইল ফোনে কথা হয়। ঐদিন বিকেলে শাকের পাহাড়তলী বউ বাজার এলাকায় গিয়ে আজিজের সঙ্গে দেখা করে রাত ৯টায় খুরুশকুল যেতে বলে। রাত ৯টায় জাকির ও শাকের, আবদুল আজিজের ইকিবাইকে করে খুরুশকুল কৃষ্টের দোকানের সামনে থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তার দিকে যায়। কিছু দূর যাওয়ার পর ডিসি রোড কবরস্থানের পাশে খাস জমিতে পৌঁছানোর পর জাকির ও শাকের আবদুল আজিজকে গাড়ি থেকে নামায়।

এরপর শাকের তার সঙ্গে থাকা একটি ধারালো ছোরা বের করে আবদুল আজিজের তলপেটে জখম করে। আজিজ চিৎকার করলে জাকির দ্রুত তার মুখ চেপে ধরে। এরপরও আজিজ নাড়াচাড়া করলে জাকির শাকেরের হাত থেকে ধারালো ছোরা কেড়ে নিয়ে আবদুল আজিজের নাভির নিচে জখম করে। এরপর আজিজ মারা যাওয়ার পর ইজিবাইকটি নিয়ে ঈদগাঁও বঙ্কিম বাজারে চলে যায়। আর ইজিবাইকটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ইজিবাইক বিক্রি থেকে শাকের কে ১০ হাজার টাকা ভাগ দেয় এবং দুইজনই বাড়িতে চলে যায়।

অপরদিকে কিশোর এবাদুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকালে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি জাহিদুল ইসলাম রাকিবকে (১৭) শহরের সমিতিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামির দোখানো মতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত টিপ ছোরা উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় গেল ২২ জুন রাত ৮টার দিকে ফদনার ডেইল খেলার মাঠে নান্নু, সালাউদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম রাকিব ও এবাদুল্লাহসহ (১৫) আড্ডা দেয়ার সময় এবাদুল্লাহকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এর পরদিন শুক্রবার (২৩ জুন) রাত ৯ টায় জাহিদুল ইসলাম রাকিব, নান্নু ও সালাউদ্দিন সৈকতের ঝাউবাগানের ভেতরে অবস্থান করে এবাদুল্লাহকে নান্নু মোবাইলে ফোন করে কুতুবদিয়া পাড়া ঝাউবাগানে আসতে বলে। ১০ মিনিট পর এবাদুল্লাহ ঝাউবাগানে উপস্থিত হয়।

এরপর নান্নু, সালাউদ্দিন, জাহিদুল ইসলাম রাকিব এবাদুল্লাহসহ মোট ৪ জন ছিল। সবাই নান্নুর প্রেমিকার বিষয় কথা বলে। প্রেমিকার সঙ্গে নান্নুর দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। প্রেমিকা এবং নান্নুর প্রেমের ফাটল ধরলে নান্নুর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য এবাদুল্লাহর কাছে মোবাইলে কল করে খোঁজ খবর নেয়। এবাদুল্লাহর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় নান্নুর প্রেমিকাকে এবাদুল্লাহ বলে নান্নু খারাপ ছেলে, গাঁজা, ইয়াবা খায় এবং নানা ধরনের নেশা করে।

পরবর্তীতে প্রেমিকার সঙ্গে এবাদুল্লাহ মোবাইল চেক করে মোবাইলে প্রেমিকার সঙ্গে এবাদুল্লাহর প্রেমের বিভিন্ন এসএমএস, কল রেকর্ড নান্নুর প্রেমিকা এবং এবাদুল্লার একসঙ্গে তোলা কিছু ছবি দেখতে পায়। তখন নান্নু আরও ক্ষুব্ধ এবং উত্তেজিত হয়ে পড়ে।

‘এবাদুল্লাহর মোবাইলটি নান্নু হাতে ছিল, কথা বলতে বলতে নান্নু এবাদুল্লাহর মোবাইলটি তার পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে। তখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়লে সালাউদ্দিন রশি বের করে এবাদুল্লাহর গলায় রশি পেঁচিয়ে চেপে ধরে, নান্নু এবাদুল্লাহকে মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর জাহিদুল ইসলাম এবাদুল্লাহর দুই হাত চেপে ধরে রাখে, নান্নু একপাশ থেকে এবং সালাউদ্দিন একপাশ থেকে গলার রশি ধরে টানাটানি করে হত্যা করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সালাউদ্দিনের পকেট থেকে নান্নু ধারালো ছোরা বের করে এবাদুল্লাহর পেটে আনুমানিক ১০/১১টি জখম করে। এরপর এবাদুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত হলে নান্নু, সালাউদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, ইজিবাইক চালক আবদুল আজিজ হত্যাকাণ্ডে ২ জন ও কিশোর এবাদুল্লা হত্যাকাণ্ডে ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন