হোম জাতীয় তারেক রহমানকে সাজা দিতে পিস্তল ঠেকিয়ে চাপ দেয়া হয়: বিচারক মোতাহের হোসেন

তারেক রহমানকে সাজা দিতে পিস্তল ঠেকিয়ে চাপ দেয়া হয়: বিচারক মোতাহের হোসেন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 12 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

ফরমায়েশি সাজা দেয়ার নির্দেশ ছিল; হুমকি আর চাপ দেয় রাষ্ট্রযন্ত্র। কিন্তু, তিনি তা মানেননি; খালাস দিয়েছেন আসামিকে। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফলাফল- প্রাণভয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। দেশান্তরী হয়েও রক্ষা হয়নি যেন। এখন বিগত সরকারের পতনের পর দেশে ফেরার আর দেশসেবার আকুলতা তার কণ্ঠে। বলছি, বিচারপতি মোতাহের হোসেনের কথা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অর্থ পাচার মামলায় খালাস দেয়ায়; যাকে বরণ করতে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। কী ঘটেছিল সেসময় এনিয়ে ভার্চুয়ালি যমুনা টেলিভিশনের সাথে কথা বলেছেন অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোতাহের হোসেন অর্থ পাচার মামলায় বেকসুর খালাস দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। সেসময়ের কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে যেন জানান দিয়েছিলেন নিজের কঠোর অবস্থানের। কেবল ন্যায়বিচার করতে গিয়ে বদলে যায় তার জীবন।

তারেক রহমানকে খালাস দেয়ায় কী হয়েছিল সেসময়? মামলার রায়ের আগেই বা কী ঘটেছিল? বিচারক মোতাহের হোসেন জানান, তিনি কখনও ছিলেন পিস্তলের মুখে। তৎকালীন আইনমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও সাবেক আইন সচিব জহিরুল হক দুলালের নির্দেশনায় ফরমায়েসী রায় ঘোষণার জন্য চাপ দেয়া হয় তাকে।

ঘটনার পূর্বের কাহিনী বর্ণনা দিতে গিয়ে ফিনল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বিচারক মোতাহের হোসেন শোনালেন ভয়ঙ্কর সেসব ঘটনা।

তিনি বলেন, তদানীন্তন ঢাকার জেলা জজ, মেট্রোপলিটন সেশন জজ তারা আমার চেম্বারে এসে হুমকি দেয়। বলে, আপনি যদি তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে চেম্বার থেকে বের হন, তাহলে কিন্তু আপনার লাশ আর পাওয়া যাবে না। গুম হয়ে যাবেন। তৎকালীন আইনসচিব শেখ জহিরুল হক ও মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বিকাশ কুমার সাহা (যুগ্ম সচিব) তারা নানাভাবে অস্ত্রের মুখে হুমকি দিতো আমাকে। একবার বন্দুক বের করে আমার বুকে ধরে, বলে একবার ট্রিগার চাপলে ১০টি গুলি আপনার বুক ভেদ করে চলে যাবে। আপনি তারেক রহমানকে সাজা দেবেন কিনা বলেন?

এই বিচারকের মতে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সেই মামলার স্বাক্ষ্যপ্রমাণ অনুযায়ী সাজা দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দিতে, লিখিত রায়ে স্বাক্ষর করার চাপও ছিল মোতাহের হোসেনের ওপর। ব্যক্তিগতভাবে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার মামলার বিচার করা এই বিচারকের কখনও সাক্ষাৎ বা আলাপ হয়নি তারেক রহমানের সাথে। শুধু দৃঢ় অবস্থান ছিল ন্যায়বিচার নিশ্চিতে।

বিচারক মোতাহের হোসেন বলেন, সরকারি স্বাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য দিয়ে কোনোদিন কোনো আসামীকে দোষীসাব্যস্ত করা যায় না। তার বিপক্ষে স্বাক্ষীপ্রমাণ ছিল না। এরকম একটি মামলায় তিনি নিরীহ, তাকে প্রধানমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রীর হুকুমে শাস্তি দেবো এটি আমার বিবেক সায় দেয়নি। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমি সত্য বিচার করবো ও ন্যায়সঙ্গত রায় দেবো।

তবে ফরমায়েসি রায় না দেয়ার খেসারতও দিতে হয়েছে মোতাহের হোসেনকে। দেশ ছাড়তে হয় প্রাণভয়ে। প্রথমে মালয়েশিয়া, এরপর সেখান থেকেও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার ভয়ে পালিয়ে যেতে হয় নেপালে। আর ২০২২ সালে ছেলেকে নিয়ে আশ্রয় নেন ফিনল্যান্ডে।

বিষয়টি নিয়ে বিচারক মোতাহের হোসেন বলেন, মালয়েশিয়া থেকে ছয়জনকে গ্রেফতার করার জন্য ৩৪জন গোয়েন্দা ও চারজন মন্ত্রী দেশটিতে যায়। এই সংবাদ পাওয়ার পর আমি বাসায় না গিয়ে ৫-৭শ মাইল দূরে চলে যাই। জঙ্গলে গিয়ে ১৬ দিন বাস করি।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর আশাবাদী বিচারক মোতাহের হোসেন। দেশ ফিরতে চান দ্রুত সময়ে। তিনি বলেন, দেশ ছাড়ার পর আইন ও সংবিধান নিয়ে গবেষণা করছি। যদি দেশের সেবা করার ও আইন সংস্কারের কাজের সুযোগ পাই তাহলে দেশে ফিরে আবারও সেবা করতে চাই।

প্রসঙ্গত, তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে বিচারপতি মোতাহের হোসেনের দেয়া সেই রায়ের পর ২০১৪ সালে দুদক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে। ৮ বছর পর করে মামলাও। সম্প্রতি এই মামলা থেকে খালাস পান আলোচিত এই অবসরপ্রাপ্ত বিচারক।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন